বর্তমান সময়ে নারীদের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং উদ্বেগজনক বিষয়। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির এই যুগে স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে আত্মরক্ষার এক শক্তিশালী হাতিয়ার। কিছু বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে নারীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সচেতন থাকতে পারেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, নারীদের নিরাপত্তায় সহায়ক এমনই ৫টি গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল অ্যাপ সম্পর্কে:
১. বিসেফ (bSafe): জরুরি মুহূর্তের সাথি
বিসেফ অ্যাপটি যেকোনো বিপদের মুহূর্তে আপনার পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:
SOS বোতাম: ব্যবহারকারী এসওএস বোতাম চাপলেই পূর্বনির্ধারিত কন্টাক্টদের কাছে সাহায্যের সংকেত পৌঁছে যায়।
লাইভ লোকেশন শেয়ারিং: এই ফিচারের মাধ্যমে পরিবার বা বন্ধু দ্রুত আপনার লাইভ লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে।
অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিং: জরুরি মুহূর্তে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে এমন অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিং অপশনও এতে রয়েছে।
উপকারিতা: যেকোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে সহজেই সহায়তা চাওয়া সম্ভব হয় এবং প্রমাণ রাখা যায়।
২. সেফটিপিন (Safetipin): আপনার এলাকার নিরাপত্তা রেটিং
অপরিচিত এলাকায় চলাচলের আগে নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চান? সেফটিপিন অ্যাপটি আপনার জন্য।
নিরাপত্তা নিরীক্ষণ: এটি ব্যবহারকারীর চারপাশের এলাকার নিরাপত্তা রেটিং দেখায়।
সুরক্ষা নির্ণয়: অ্যাপে রাস্তার আলো, চলাচলকারী মানুষের সংখ্যা, পুলিশি তৎপরতা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে এলাকাকে নিরাপদ, ঝুঁকিপূর্ণ অথবা অনিরাপদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
ব্যবহারকারীর অবদান: ব্যবহারকারী চাইলে নিজের মতামত ও ছবি দিয়েও নিরাপত্তা রেটিং আপডেট করতে পারে।
উপকারিতা: অপরিচিত এলাকা বা রাতের সময়ে কোথায় চলাফেরা নিরাপদ, তা আগে থেকেই বুঝে নেওয়া যায়।
৩. সিটিজেনসিওপ (CitizenCOP): অপরাধ দমনের হাতিয়ার
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে সিটিজেনসিওপ একটি কার্যকর অ্যাপ।
অপরাধ রিপোর্ট: এই অ্যাপের মাধ্যমে যেকোনো অপরাধ বা সন্দেহজনক কার্যকলাপ সরাসরি পুলিশকে জানানো যায়।
জরুরি সেবা: লোকেশন ট্র্যাকিং ও SOS সেবা ছাড়াও পুলিশ বা অন্যান্য সেবা সংস্থার সাথে দ্রুত যোগাযোগ করার অপশন রয়েছে।
উপকারিতা: বিপদের মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য পাওয়া সহজ হয় এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা যায়।
৪. লাইফ৩৬০ (Life360): পরিবার ও বন্ধুর সাথে নিরাপদ সংযোগ
পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই অ্যাপটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।
ফ্যামিলি সার্কেল: পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে একটি সার্কেল তৈরি করে একে অপরের লাইভ লোকেশন ট্র্যাক করা যায়।
স্বয়ংক্রিয় নোটিফিকেশন: কেউ কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছালে বা সেখান থেকে বের হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নোটিফিকেশন দিয়ে জানানো হয়।
জরুরি বার্তা: জরুরি মুহূর্তে লোকেশনসহ এসওএস বার্তা পাঠানো যায়।
উপকারিতা: আপনি একা চলাফেরার সময় পরিবারের সদস্যরা সহজেই জানতে পারে আপনি কোথায় আছেন।
৫. সেক২সেফটি (Shake2Safety): এক ঝাঁকুনিতেই সাহায্য
যখন আপনার হাত ব্যস্ত থাকে, তখন এই অ্যাপটি কার্যকরভাবে কাজ করে।
স্বয়ংক্রিয় বার্তা: ব্যবহারকারী ফোন ঝাঁকালেই বা পাওয়ার বাটন কয়েকবার চাপলেই নির্ধারিত নম্বরে এসওএস বার্তা ও লোকেশন পাঠিয়ে দেয়।
ইন্টারনেট ছাড়াই কাজ: ইন্টারনেট ছাড়াও এসএমএস ও কলের মাধ্যমে সহায়তা পাঠানো যায়।
উপকারিতা: হাত ব্যস্ত থাকলেও মাত্র এক ঝাঁকুনিতেই সহায়তা চাওয়া যায়, যা হঠাৎ বিপদের সময় খুব কার্যকর।
এই অ্যাপগুলো নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে শুধুমাত্র অ্যাপ ব্যবহার করলেই নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতা, আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ এবং আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণাও জরুরি। স্মার্টফোনে এই ধরনের সুরক্ষা অ্যাপ রেখে একজন নারী নিজেকে আরও আত্মবিশ্বাসী ও নিরাপদ রাখতে পারেন।