গরমের পান স্বস্তি, এয়ার কুলার কেনার আগে জেনে নিন জরুরি বিষয়গুলি

তীব্র গরমে এসি (Air Conditioner) নিঃসন্দেহে আরাম দিলেও, যাদের জন্য এটি ব্যয়বহুল অথবা যারা এসি ব্যবহার করতে চান না, তাদের জন্য এয়ার কুলার (Air Cooler) একটি চমৎকার বিকল্প। বিশেষ করে যেখানে এসির ইনস্টলেশন সম্ভব নয় বা ব্যয়বহুল, সেখানে এয়ার কুলার খুবই কার্যকর। তবে, নতুন এয়ার কুলার কেনার সময় কিছু বিষয় আগে থেকেই জেনে নেওয়া দরকার, যাতে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সাশ্রয়ী এবং ভালো মানের কুলার কিনতে পারেন।

এয়ার কুলার কেনার সময় যে বিষয়গুলিতে নজর রাখবেন:
১. আকার (Size): আপনার ঘরের আয়তনের উপর নির্ভর করে কুলারের আকার নির্বাচন করুন। ছোট বা মাঝারি ঘরের জন্য পার্সোনাল (Personal) বা টাওয়ার কুলার (Tower Cooler) উপযুক্ত। বড় মাপের ঘরের জন্য ডেজার্ট কুলার (Desert Cooler) সবচেয়ে কার্যকর। একটি সাধারণ নিয়ম হলো, ঘর যদি ১৫০ থেকে ৩০০ স্কয়ার ফিটের মধ্যে হয়, তাহলে পার্সোনাল কুলার, আর ৩০০ স্কয়ার ফিটের বেশি হলে ডেজার্ট কুলার বেশি আরাম দেবে।

২. ওয়াটার ট্যাঙ্কের ক্ষমতা (Water Tank Capacity): ট্যাঙ্কের ক্ষমতা যত বেশি হবে, তত কম ঘন ঘন জল ভরতে হবে। ছোট ঘরের জন্য ১৫ লিটার এবং মাঝারি মাপের ঘরের জন্য ২৫ লিটার বা তার বেশি ওয়াটার ট্যাঙ্কের কুলার পছন্দ করা ভালো।

৩. জলবায়ু অনুযায়ী কুলার (Cooler According to Climate): আপনার এলাকার জলবায়ু কেমন, তা দেখে কুলার কিনুন। পরিবেশ যদি রুক্ষ বা শুষ্ক হয়, তাহলে ডেজার্ট কুলার ভালো, কারণ এটি বেশি জল শোষণ করে ঠান্ডা বাতাস বের করে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের মাত্রা বেশি অর্থাৎ পরিবেশ যদি আর্দ্র হয়, সেক্ষেত্রে পার্সোনাল বা টাওয়ার কুলার অনেক বেশি কার্যকরী, কারণ এটি কম আর্দ্রতা ছড়ায়।

৪. কুলারের শব্দ (Cooler Noise): কিছু কুলার থেকে মোটর বা ফ্যানের কারণে বেশ আওয়াজ হয়, যা বিরক্তির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময়। তাই কুলার কেনার সময় অবশ্যই চালিয়ে দেখে নিন কেমন আওয়াজ হচ্ছে এবং ফ্যানের স্পিড বেশি হলে অপ্রীতিকর শব্দ হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিন।

৫. অটো ফিল ফাংশন (Auto Fill Function): কুলারে জল রিফিল করা একটি নিয়মিত কাজ। তাই কুলারে অটো ফিল ফাংশন রয়েছে কিনা, তা দেখে নেওয়া জরুরি। এই ফিচার থাকলে ট্যাঙ্কে জল শুকিয়ে যাওয়ার চিন্তা থাকে না, যা মোটরের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।

৬. কুলিং প্যাডের গুণমান (Quality of Cooling Pads): কুলিং প্যাডগুলো কুলারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এরাই জল শোষণ করে বাতাস ঠান্ডা করে। হানিকম্ব প্যাড (Honeycomb Pads) অন্যান্য প্যাড (যেমন – উল কাঠ বা অ্যাস্পেন প্যাডস) থেকে ভালো মানের হয়, কারণ এগুলি দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা থাকে এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কম সময় খরচ হয়।

৭. অতিরিক্ত আইস চেম্বার (Additional Ice Chamber): দ্রুত ঠান্ডা হওয়ার জন্য কিছু কুলারে একটি আলাদা আইস চেম্বার থাকে। ট্যাঙ্কের জল দ্রুত ঠান্ডা করার জন্য এই চেম্বারে বরফ যোগ করতে পারেন, যা তাৎক্ষণিক ঠান্ডা বাতাস পেতে সাহায্য করে।

৮. এয়ার কুলার কোথায় রাখবেন (Where to Place Air Cooler): কুলারের ধরন অনুযায়ী সঠিক জায়গায় বসানো তার কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডেজার্ট কুলার ঘরের বাইরে বা জানালায় রাখতে হয়, যাতে এটি বাইরের বাতাস টেনে ঠান্ডা করে ঘরে পাঠাতে পারে। তবে পার্সোনাল বা টাওয়ার কুলার ঘরের ভেতরে যেকোনো জায়গায় রাখা সম্ভব।

৯. বিদ্যুতের খরচ (Electricity Consumption): এয়ার কুলার কেনার সময় বিদ্যুতের খরচ কেমন হবে, তা দেখে নিতে ভুলবেন না। সাধারণত আধুনিক কুলারগুলো অনেক বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয় এবং এসির তুলনায় এদের বিদ্যুতের খরচ অনেক কম। কিছু আধুনিক কুলারে ইনভারটার টেকনোলজি যুক্ত থাকে, যা বিদ্যুৎ ব্যবহারে আরও সাশ্রয়ী করে তোলে।

গরমকালে এসির চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী বিকল্প হলো এয়ার কুলার। উপরের বিষয়গুলি খেয়াল রেখে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক এয়ার কুলারটি বেছে নিলে আপনি বিদ্যুতের খরচ বাঁচিয়ে গরম থেকে আরাম পেতে পারেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy