বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল জেলের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে একের পর এক বিতর্ক সামনে এল সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া চাঞ্চল্যকর ভিডিওর মাধ্যমে। ভিডিওগুলিতে দেখা গিয়েছে, জেলের অভ্যন্তরে বন্দিরা মদ্যপান করছে, উদ্দাম পার্টি করছে এবং অবাধে টেলিভিশন-মোবাইল ব্যবহার করছে।
ভিডিওগুলি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গঙ্গাধারাইয়া পরমেশ্বরা জেল ব্যবস্থাপনায় বড়সড় সংস্কার এবং শাস্তিমূলক পদক্ষেপের ঘোষণা করেন। তাতে ইতিমধ্যেই দুই জেল আধিকারিককে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) এবং এক জনকে বদলি করা হয়েছে।
সরকারের কড়া পদক্ষেপ ও উচ্চপর্যায়ের কমিটি
বেঙ্গালুরুর পারাপ্পানা আগ্রহারা সেন্ট্রাল জেল থেকে ভিডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় রাজ্যের নির্দেশে একটি হাই-পাওয়ার কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইন ও শৃঙ্খলা) হিতেন্দ্র নাথের নেতৃত্বে এই কমিটি রাজ্যের সব জেলের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে।
তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে জেলের চিফ সুপারিনটেনডেন্ট কে. সুরেশকে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি, সুপারিনটেনডেন্ট মাইগেরি এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট অশোককে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য এই প্রথম বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল জেলের দায়িত্বে একজন আইপিএস অফিসার নিয়োগ করা হচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিওতে বিলাসবহুল পার্টির ছবি
রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া পাঁচটি ভিডিওতে ধরা পড়েছে বন্দিদের ‘ভিআইপি জেল লাইফ’। এর মধ্যে তিনটি ভিডিও ২০২৩ সালের হলেও, বাকি দুটি এই বছরের বলে স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গ্লাসে মদ, কাটা ফল এবং ভাজা বাদাম—সব মিলিয়ে রীতিমতো পার্টির আয়োজন! অন্য ভিডিওয় মদের বোতল সাজিয়ে নাচছে কয়েকজন বন্দি।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর দৃশ্যটি ছিল কুখ্যাত অপরাধীদের নিয়ে। আইএসআইএস নিয়োগকর্তা জুহাইব হামিদ শাকিল মান্না-কে দেখা যায় মোবাইল স্ক্রল করতে করতে চা খেতে। অন্যদিকে, ১৮টি ধর্ষণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত উমেশ রেড্ডিও দুটি অ্যান্ড্রয়েড ও একটি কীপ্যাড মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন। তাঁর ব্যারাকে একটি টেলিভিশন সেটও ছিল। (উল্লেখ্য, মানসিক অসুস্থতার কারণে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে ৩০ বছরের সাজা দিয়েছিল, পরে মেডিক্যাল পরীক্ষায় তিনি ‘সুস্থ’ ঘোষিত হন।)
রাজ্য জুড়ে নতুন নির্দেশিকা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, রাজ্যের সব জেলে এখন থেকে প্রতি ১৫ দিনে একবার সিসিটিভি ফুটেজ অডিট করতে হবে। সিনিয়র অফিসারদের নিয়মিত পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া, একই জেলে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত সব কর্মীকে অন্যত্র বদলি করা হবে। প্রায় ৫,০০০ বন্দি থাকা পারাপ্পানা আগ্রহারা জেলের ভিড় কমাতেও সরকার বন্দিদের অন্য স্থানে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।