দত্তাবাদে স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিলা খুনের ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসছে বিধাননগর কমিশনারেটের তদন্তকারীদের। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ব্যবসায়ীকে খুনে নীলবাতি লাগানো সরকারি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও সেটি রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মনের কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা।
এই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই বিডিও-র গাড়ির চালক রাজু ঢালি এবং ঠিকাদার তুফান থাপাকে গ্রেফতার করেছে। ধৃত দু’জনকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতেই বেরিয়ে এসেছে নৃশংসতার নেপথ্যের কাহিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় অভিযুক্তরা স্বীকার করেছেন যে ঘটনাস্থলে মোট ছ’জন উপস্থিত ছিলেন। তবে, তাঁদের দাবি, খুন করা তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল না; ব্যবসায়ীকে ভয় দেখাতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে।
লাঠির ঘায়ে অচেতন, ফেলে পালায় অভিযুক্তরা
অভিযুক্তদের বয়ান অনুযায়ী, প্রথমে কোমরের বেল্ট এবং পরে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় ব্যবসায়ীকে। সেই সময় আচমকাই একটি লাঠির ঘা স্বপন কামিলার মাথায় লাগলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়েন। অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না মেলায় আতঙ্কিত হয়ে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়।
বিধাননগর কমিশনারেটের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, “অভিযুক্তরা যখন দেখল ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ী আর তাঁদের ডাকাডাকিতে সাড়া দিচ্ছেন না, সেই সময় কেন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না? মূলত খুনের মোটিভ ছিল কি না, সেটা আগে আমাদের জানা উচিত। সেই বিষয়েই তদন্ত চলছে।”
সিসিটিভি ফুটেজে নীলবাতি লাগানো গাড়ি
ঘটনার আটদিন পর বিধাননগরের যাত্রাগাছির খালপাড় থেকে উদ্ধার হয়েছিল স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিলার দেহ। এই তদন্তে নেমে পুলিশের নজরে আসে একটি সরকারি গাড়ি। যাত্রাগাছির সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাট থেকে দ্রুত গতিতে নীলবাতি লাগানো একটি গাড়ি বেরিয়ে যাত্রাগাছির দিকে যাচ্ছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ফুটেজে স্পষ্ট নীলবাতি দেখা গেলেও গাড়িটি রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মনের কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, খুনের পরদিন একই নীলবাতি গাড়ি নিয়ে অভিযুক্ত রাজু ঢালি এবং তাঁর সহযোগী কলকাতা বিমানবন্দরের দিকে গিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের ধারণা, এই গাড়িটিই দেহ লোপাটের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
এদিকে, নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিডিও প্রশান্ত বর্মন। তিনি বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। কলকাতায় আমার কোনও বাড়ি নেই, কোনও সোনা চুরি হয়নি।” তবে, বিজেপি কর্মীরা তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে স্থানীয় থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে একটি বড় চক্র কাজ করছে।