কলকাতা: নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাসাগর মেলা। তার ঠিক এক মাস আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেলার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সাগর প্রশাসন। পুণ্যার্থীদের যাতায়াত মসৃণ রাখতে সেচ দফতরের বরাদ্দ ৩০ কোটি টাকা খরচ করে মুড়িগঙ্গা নদীর পলি তোলার (ড্রেজিং) কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে গঙ্গাসাগরে পৌঁছাতে ব্যবহৃত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জেটির সংস্কার কাজও চলছে।
সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা জানিয়েছেন, মুখ্যসচিবের নির্দেশ অনুযায়ী গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “মুড়িগঙ্গা নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। এর ফলে ভেসেল পরিষেবা আরও মসৃণ হবে। সেচ দফতর প্রাথমিকভাবে এর জন্য ৩০ কোটি টাকার বাজেট পাশ করেছে।”
ভাটার সমস্যা মোকাবিলা
গঙ্গাসাগর মেলার সময় ২৪ ঘণ্টা ভেসেল পরিষেবা চালু রাখা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু মুড়িগঙ্গার নাব্যতা কম থাকায় প্রতিবারই ভাটার সময় ভেসেল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়, যার জেরে ঘাটগুলিতে পুণ্যার্থীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি অতীতে মুড়িগঙ্গার চড়ে ভেসেল আটকে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সেই সমস্যা এড়াতেই দ্রুততার সঙ্গে পলি তোলার কাজ শুরু হয়েছে। নামখানা, বেনুবন, কাকদ্বীপ ও কচুবেড়িয়ার জেটিগুলিও সংস্কার করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবা ও যাত্রী নিয়ন্ত্রণ
প্রশাসন আশা করছে, এই বছর গঙ্গাসাগরে সাধুসন্ত ও পুণ্যার্থীদের ভিড় অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে অতিরিক্ত যাত্রী নিবাস এবং বাফার জোন তৈরি করা হচ্ছে।
পরিবহণ দফতর এবার জলপথে ভেসেল পরিষেবার পাশাপাশি স্থলপথে কচুবেড়িয়া থেকে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বাস পরিষেবা দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে মন্ত্রী জানান, “মেলা প্রাঙ্গণে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের পাশাপাশি, স্বাস্থ্য ভবনের সাহায্যে অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্বাস্থ্য ভবন মিলে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা রাখছে। থাকছে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সও।”
সম্প্রতি নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের উপস্থিতিতে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বৈঠকে পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা, জল, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবাগুলিতে বাড়তি জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কপিল মুনির আশ্রমের সামনের বাঁধ মেরামতি এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভেঙে যাওয়া ১ থেকে ৬ নম্বর স্নানঘাট সংস্কারের কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। কপিল মুনির আশ্রম এবং মেলা প্রাঙ্গণে রঙের কাজও শুরু হয়েছে।