এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হওয়া চাকরির পর নতুন করে ফল প্রকাশের পর ফের চরম জটিলতা তৈরি হয়েছে রাজ্যে। সোমবার নতুন পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার রাস্তায় নামলেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষিকারা।
তাঁদের প্রধান দাবি, পর্যাপ্ত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে দ্বিতীয় তালিকায় যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকদের সকলের নাম আসে এবং কেউ যেন বঞ্চিত না হন। নতুন পরীক্ষার্থী এবং চাকরিহারা, উভয় পক্ষের মুখেই শূন্যপদ বৃদ্ধির দাবি শোনা গিয়েছে।
নতুনদের অভিযোগের মুখে অভিজ্ঞ শিক্ষকরা
২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে নতুন করে নিয়োগের ফল প্রকাশিত হয়েছে। গত শনিবার ইন্টারভিউয়ের জন্য তালিকা প্রকাশের পর নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
যাঁরা এবার প্রথম পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের অভিযোগ—লিখিত পরীক্ষা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে অনেকে ৭০-এর মধ্যে পুরো ৭০ নম্বর পেয়েও ইন্টারভিউয়ের ডাক পাননি। কারণ, চাকরিহারা পরীক্ষার্থীরা চাকরির অভিজ্ঞতার জন্য অতিরিক্ত ১০ নম্বর পাওয়ায়, অনেক বিষয়ে ন্যূনতম পাশ মার্ক (কাট অফ) ৭০-এর উপরে চলে গেছে। ফলে পুরো নম্বর পেয়েও নতুনরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
এই অভিযোগে সোমবার বিকাশ ভবন অভিযান করেছিলেন নতুন পরীক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সেই অভিযোগের মুখে পাল্টা রাস্তায় নামলেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
বিকাশ ভবনে ডেপুটেশন, অভিজ্ঞতা নিয়ে পালটা যুক্তি
মঙ্গলবার করুণাময়ী থেকে বিকাশ ভবন পর্যন্ত মিছিল করেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের মূল দাবি ছিল: একজনও যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকের যেন চাকরি না যায়। সেই দাবি নিয়েই তাঁরা বিকাশ ভবনে ডেপুটেশন জমা দেন।
আন্দোলনের অন্যতম মুখ সঙ্গীতা সাহা বলেন, “পর্যাপ্ত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম নথি যাচাইয়ে আসেনি, সেই সমস্ত যোগ্য শিক্ষকের নাম যেন সেকেন্ড লিস্টে আসে। পাশাপাশি অবিলম্বে নবম-দশমের ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।”
অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর নিয়ে নতুন পরীক্ষার্থীরা যে বিরোধিতা শুরু করেছেন, সেই প্রসঙ্গে সঙ্গীতা সাহা পালটা যুক্তি দিয়ে বলেন, “ওরা মনে হয় গেজেট ভালো করে পড়েনি। নতুনদের সঙ্গে আমার পরীক্ষায় বসতে চাইনি। আর অভিজ্ঞতার দাম সব জায়গায় দেওয়া হয়।”
দৃষ্টিহীন শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সাহা, যার নাম নথি যাচাইয়ের তালিকায় আসেনি, তিনি মিছিলে এসে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের জীবন বিপন্ন। একাদশ-দ্বাদশে নাম আসেনি। নবম-দশমেও নাম আসবে কি না, বুঝতে পারছি না। যেভাবে কাট অফ নম্বর হচ্ছে, সেখানে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।”
শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে কি মিটবে সঙ্কট?
সোমবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যোগ্যদের জন্য আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক নেতা চিন্ময় মণ্ডল বলেন, “আমরা চাই শিক্ষামন্ত্রীর এই কথা দ্রুত বাস্তবায়িত হোক। বর্তমানে দাঁড়িয়ে যোগ্যরা চাকরি হারিয়েছে, তার একটা জ্বালা রয়েছে। পাশাপাশি নতুনরা এত বছর নিয়োগ নেই। তাদেরও একটা জ্বালা রয়েছে। আমরা চাইব পর্যাপ্ত আসন দিয়ে সকলের চাকরি হোক।”
যোগ্য চাকরিহারা এবং নতুন পরীক্ষার্থী—উভয়পক্ষের চাকরির দাবিতে রাজ্যজুড়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করলেই সমাধান হবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।