ইলিশের আকাল, চড়া দামে দিশেহারা বাঙালি, বাংলাদেশের ইলিশ আমদানি নিয়ে জল্পনা?

বর্ষা সমাগত, কিন্তু বাংলাদেশের নদনদীতে ইলিশের সেই চেনা রূপ উধাও। যেটুকু মিলছে, তার দাম শুনে মধ্যবিত্তের চোখ কপালে। বাজারে এখন এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে ২৮০০ টাকা, আর ৬০০ গ্রামের ইলিশ ২০০০ টাকা কেজি। ইলিশের ভরা মরসুম সত্ত্বেও সাধারণ ক্রেতাদের ভাগ্যে জুটছে না এই সুস্বাদু মাছের স্বাদ। ঢাকার বাজারে এক কেজি ইলিশ কিনতে ২৬০০ থেকে ২৮০০ টাকা গুনতে হচ্ছে, যা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। অন্যান্য মাছেরও দাম চড়া। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ভরা মরসুম হওয়া সত্ত্বেও এবার ইলিশের সরবরাহ তলানিতে। সাগর বা নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না বললেই চলে, আর সে কারণেই এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি।

অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ ও বাজারের প্রতিক্রিয়া:

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশের দাম আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূস দাম বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রককে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে এই সিদ্ধান্তের পর ঢাকার বাজারে উল্টো ফল হয়েছে, বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি: ‘অযৌক্তিক’ মূল্য নির্ধারণ!

ইলিশের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার খবরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা মূল্য নির্ধারণ হলে বিক্রি বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং ইলিশের দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করা অসম্ভব। বর্তমানে ঢাকার বাজারে ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১২০০-১৪০০ টাকা কেজি এবং ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এখনও ইলিশের মরসুম পুরোপুরি শুরু হয়নি, আর যা পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

ভারতের বাঙালিদের পদ্মাপারের ইলিশের টান: আমদানির আশায় পশ্চিমবঙ্গ

ওপার বাংলার বাঙালিরাও পদ্মার ইলিশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। এক টুকরো ইলিশ ভাজা বা ভাপা হলেই রবিবারের দুপুর জমে ওঠে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে ৫ হাজার টন ইলিশ আমদানির জন্য পশ্চিমবঙ্গের ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এই মাসেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রককে চিঠি দিতে চলেছে। শুধু চিঠি নয়, একটি প্রতিনিধিদলও পাঠিয়ে তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী।

অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রতি বছর দুর্গাপূজার আগে বাংলাদেশ সরকার ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেয়। কিন্তু সে সময় বাংলাদেশে ইলিশের সরবরাহ কম থাকে। তাই এ বছর আগেভাগে অনুমতি পাওয়ার জন্য প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতুল দাস জানান, গত বছর ৫ হাজার টন ইলিশ আমদানির আবেদন করা হলেও দুর্গাপূজার সময় ৩ হাজার টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র ৬০০-৮০০ টন ইলিশ এসেছিল।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রফতানি নীতি অনুযায়ী ইলিশ শর্তসাপেক্ষে রফতানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় রয়েছে। তাই সরকারের অনুমোদন ছাড়া ইলিশ রফতানির সুযোগ নেই। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে যে ফাটল দেখা দিয়েছে, তাতে এ বছর যতটা বেশি সম্ভব ইলিশ আমদানি করাই এখন সমিতির কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy