২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতা-কর্মীদের জন্য একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ তৈরি করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার দলের ৯ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীর সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এই নির্দেশাবলী দেন, যার মূল লক্ষ্য দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা দূর করে বুথস্তরের ক্ষমতা বাড়ানো।
অভিষেক তার ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটের এই বৈঠকে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ২০২১ সালের বিধানসভা এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যে বুথগুলিতে বিজেপি ধারাবাহিক ভাবে ১০০-র বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল, সেই সব বুথের সভাপতি এবং বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ) পরিবর্তন করতে হবে। যদিও ভোট বিশ্লেষকদের মতে, এমন বুথের সংখ্যা ২৬ হাজারের অনেক কম, তবু অভিষেক কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে রাজি নন। তার উদ্দেশ্য হলো, দুর্বল বুথগুলোতে সাংগঠনিক রদবদল ঘটিয়ে সেগুলোকে শক্তিশালী করে তোলা।
ভোটার তালিকা এবং এনআরসি নিয়ে কড়া বার্তা:
আগামী মাস থেকে রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ কর্মসূচি (Special Intensive Revision – SAR) শুরু হতে পারে, এই জল্পনার মধ্যে অভিষেক নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, “বিজেপি এক কোটি নাম বাদ দেওয়ার কথা বলেছে। একজনের নাম বাদ গেলেও আমরা কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেব।” তার অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন এই কর্মসূচির মাধ্যমে পেছনের দরজা দিয়ে এনআরসি চালু করার চেষ্টা করছে। অভিষেক দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, ভোটার তালিকা থেকে যেন কোনো ভুয়ো নাম তোলা না হয় এবং কমিশনের বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও) নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন কিনা, সেদিকে নজর রাখতে হবে। তার মতে, “বিএলও-দের মধ্যে রন্ধ্রে রন্ধ্রে সিপিএমের লোক রয়েছে, এদের চিহ্নিত করুন।”
‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং চৌকি মিটিংয়ের নির্দেশ:
পুজোর মরশুম শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত বুথস্তরে টানা প্রচার চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, “প্রতিটি বুথে চৌকি মিটিং করুন, ৩০-৪০ জন লোক থাকলেই হবে, মাইক না-থাকলেও হবে। বুথ ধরে ধরে পথসভা করুন।” এই প্রচারে তিনি বিজেপি কীভাবে বাংলা ভাষা এবং বাঙালির উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, তা মানুষকে বোঝাতে বলেছেন। তিনি বিজেপি নেতাদের দেখলেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, এবং নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে কটাক্ষও করেছেন।
‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পে গুরুত্ব:
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পটির উপর জোর দিয়েছেন অভিষেক। তিনি দলের সাংসদ ও বিধায়কদের তাদের নিজ নিজ এলাকায় এই প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তার কথায়, “স্বাধীনতার পর রাজ্যে কখনও এমন প্রকল্প হয়নি। সমস্ত সাংসদ ও বিধায়ক এতে অংশগ্রহণ করবেন।” এই কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূল জনগণের কাছে সরাসরি পৌঁছাতে পারবে এবং তাদের সমস্যার সমাধানে কাজ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অভিষেকের এই নির্দেশাবলী থেকে স্পষ্ট যে, তৃণমূল ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে, যেখানে বুথস্তরই তাদের প্রধান মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু।