প্রয়াত সঙ্গীত আইকন জুবিন গর্গকে নিয়ে এক ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিল অসম সরকার। গায়কের চিতাভস্ম (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ছাই) সাধারণ জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হবে। ভারতে সম্ভবত এমন ঘটনা এই প্রথম। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তা বিতরণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে। জনমানসের অভূতপূর্ব আবেগের মুখে সরকার এই অনন্য পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গত বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নগাঁও জেলায় প্রথম জুবিনের চিতাভস্ম পৌঁছলে সেখানেও ভক্তদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অসংখ্য প্রদীপ জ্বালিয়ে জুবিনকে শ্রদ্ধা জানান স্থানীয়রা। প্রদীপের আলোয় তৈরি করা হয় ‘জুবিন গার্গ অমর হউক’ লেখাটি।
চিতাভস্ম বিতরণের জন্য খুলছে অনলাইন পোর্টাল
অসমীয়া সঙ্গীত শিল্পে এবং ভারতে এক অমর কিংবদন্তি হয়ে ওঠা এই শিল্পীর অকালমৃত্যুর পর জনসাধারণের ব্যাপক চাহিদা এবং শোকের প্রেক্ষিতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
রাজ্য সরকারের মুখপাত্র ও শিক্ষামন্ত্রী রনোজ পেগু জানিয়েছেন, “আমাদের প্রিয় শিল্পী জুবিন গর্গের শেষকৃত্য সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর, অবশিষ্ট চিতাভস্ম সংস্কৃতি বিষয়ক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা শীঘ্রই একটি সহজ অনলাইন পোর্টাল চালু করব। অসমজুড়ে সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিরা এই পোর্টালের মাধ্যমে চিতাভস্মের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী তা সরবরাহ করা হবে।”
সংস্কৃতি বিভাগের একজন সচিব পর্যায়ের আধিকারিক জানিয়েছেন, আগামী দুই দিনের মধ্যেই অনলাইন পোর্টালটি প্রস্তুত হয়ে যাবে। রাজ্যজুড়ে ভক্তদের অপ্রতিরোধ্য চাহিদার কারণেই এই অনলাইন বিতরণ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য— সমস্ত অঞ্চলে সমানভাবে চিতাভস্ম বিতরণ করা এবং তা যেন উপযুক্ত ও সম্মানিত ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছয়। একই সঙ্গে সমস্ত অনলাইন প্রাপকের রেকর্ড বজায় রাখা হবে।
১৫ লক্ষ মানুষের শেষযাত্রা, আবেগের নজির
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে নৌকা ভ্রমণে গিয়ে সাঁতার কাটার সময় মৃত্যু হয় জুবিনের। তাঁর মৃত্যুতে গোটা অসম যেন ভেঙে পড়ে।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সিঙ্গাপুর থেকে জুবিনের মরদেহ অসমে এসে পৌঁছলে বোরঝার এলজিবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁর কাহিলিপাড়ার বাসভবন পর্যন্ত যে শেষযাত্রা হয়, তা এক ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে থেকে গেল। ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সেদিন ৬.৫ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। কামরূপ মেট্রোপলিটন জেলা কমিশনার সুমিত সাত্তাওয়ানের মতে, সেদিন গুয়াহাটিতে আনুমানিক ১৫ লক্ষ মানুষ জুবিনের শেষযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন! এই বিশাল জনসমাবেশ অসমের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐক্যকে তুলে ধরেছিল।
জনসাধারণের এই তীব্র আবেগের কারণেই সরকার পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন করে এবং একটি পণ্যবাহী গাড়ি থেকে ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতে চিতাভস্ম স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়, যাতে এই আইকন যথাযথ সম্মান পান। জনসাধারণের শোকের এই আবহে সরকার তাঁর চিতাভস্ম বিতরণের এই অনন্য ঘোষণা করল।