সামনেই দীপাবলি— আলোর উৎসব। যদিও রঙিন বৈদ্যুতিক আলো, বিশেষত চিনা লাইট এবং ভারতীয় টুনি বাল্বের দাপটে বাজারে এখন মোমবাতির চাহিদা অনেকটাই কম। তবুও বাঙালির ঐতিহ্য এবং দীপাবলির মানরক্ষার জন্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর শহরের কারখানাগুলিতে দিনরাত এক করে মোমবাতি তৈরি করে চলেছেন কারিগররা।
কারখানায় এখন চরম ব্যস্ততা:
গঙ্গারামপুর শহরের মোমবাতি কারখানাগুলিতে এখন চরম ব্যস্ততা চোখে পড়ছে। এক একটি কারখানায় একসঙ্গে প্রায় ২০-২২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। শ্রমিকরা জানান, একটি মোমবাতি তৈরি করতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত মিনিট, তবে একটি নয়, তৈরি হয় একসঙ্গে ৫০টি করে মোমবাতি। কারিগররা নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনরাত এক করে কাজ করছেন। প্রস্তুতকারকরা আশাবাদী, শুধুমাত্র এই মাসে প্রায় আড়াইগুণ মোমবাতি বিক্রি হবে, যার ফলে সাময়িকভাবে কর্মসংস্থানও বাড়বে।
কারিগর জয়ন্ত দাস বলেন, “অন্যান্য সময় আমরা পাঁচ থেকে সাতজন কাজ করি। কিন্তু কালীপুজোর সময় আমরা ২৫ থেকে ৩০ জন এখানে কাজ করি।”
কেন কমছে চাহিদা?
কারিগর মোহন বসাক, যিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই কাজ করছেন, তিনি জানান, তাঁদের কারখানায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ রকমের মোমবাতি তৈরি হয়। তবে বাজারে বিভিন্ন ধরনের টুনি বাল্ব এবং চিনা লাইট চলে আসায় মোমবাতির চাহিদা কমেছে। কারখানা মালিক অরিত্র বসাক বলেন, “আগে বিদ্যুৎ চলে গেলে সাধারণ মানুষ মোমবাতি জ্বালাত। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন প্রযুক্তি আসার কারণে মোমবাতির ব্যবহার প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে।”
কারিগরদের আর্জি:
মোমবাতি কারখানার কর্মী নিতাই সরকার মনে করেন, মোমবাতি শিল্পের উপর গঙ্গারামপুর শহরের অনেক মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। তিনি বলেন, “আমরা বাঙালির মানরক্ষার জন্য এই মোমবাতি তৈরি করছি।” নিতাই সরকার আরও বলেন, সরকার যদি সঠিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ঋণ ও সুবিধা দেয়, তবে এই ক্ষুদ্র শিল্প ভবিষ্যতে বৃহত্তর শিল্পে পরিণত হতে পারে এবং প্রচুর ছেলের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে।