প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রজতকান্ত রায় বুধবার সকালে কলকাতায় পরলোকগমন করেছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে ৮০ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দেশ স্বাধীনতার এক বছর আগে ১৯৪৬ সালে দাঙ্গাবিধ্বস্ত কলকাতায় তার জন্ম হয়েছিল। তার কর্মজীবনে ব্রিটিশ ও মুঘল আমলের ভারতীয় ইতিহাস বারবার উঠে এসেছে।
রজতকান্ত রায়ের পড়াশোনা শুরু হয়েছিল বালিগঞ্জ রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিখ্যাত ঐতিহাসিক অনিল শীলের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেন এবং দেশে ফিরে অধ্যাপনা শুরু করেন।
তার কর্মজীবনের একটি বড় অংশ কেটেছে প্রেসিডেন্সি কলেজে, যেখানে তিনি দীর্ঘ ৩১ বছর অধ্যাপনা করেছেন। প্রথমে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিলেও, এক বছর পর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিহাস বিভাগে চলে আসেন। সেখানে তিনি রিডার এবং পরে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন এবং পাঁচ বছর এই পদে ছিলেন। উপাচার্য হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি আবার প্রেসিডেন্সি কলেজে ফিরে এসে অধ্যাপনা করেন।
রজতকান্ত রায়ের গবেষণার মূল বিষয় ছিল ভারতের ঔপনিবেশিক ইতিহাস এবং বাংলার ইতিহাস। তার লেখা অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আরবান রুটস্ অব ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিজম’, ‘ইনডাস্ট্রিয়ালাইজেশন ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড অন্তাপ্রোনরশিপ ইন ইন্ডিয়া’। পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে তার লেখা গ্রন্থ ‘পলাশীর ষড়যন্ত্র ও সেকালের সমাজ’ আজও বহু পাঠককে আকৃষ্ট করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কেও তার গভীর অনুরাগ ছিল। বিশ্বভারতীর উপাচার্য থাকাকালীন তিনি রবীন্দ্র-গবেষণায় নিজেকে যুক্ত করেন। ২০১২ সালে তিনি রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনদেবতা’র ধারণা নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি একটি পাক্ষিক পত্রিকায় ‘তিমির অবগুণ্ঠনে’ নামে একটি উপন্যাস ধারাবাহিক লিখছিলেন, যেখানে রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন গড়ে তোলার কাহিনি উঠে এসেছিল। ২২শে শ্রাবণ, রবীন্দ্র প্রয়াণের মাত্র দুদিন আগে তার মৃত্যু হলো।