ঘুম থেকে ওঠার পর স্বাভাবিকভাবে চোখের নিচে সামান্য ফোলাভাব বা পাফি আইস দেখা গেলেও, হাত-মুখ ধোয়ার পর তা সাধারণত ঠিক হয়ে যায়। তবে দিনের পর দিন যদি আপনার চোখের তলায় ফোলাভাব ক্রমশ বাড়তে থাকে, তাহলে অবশ্যই সতর্ক হওয়া জরুরি। এটি শুধুমাত্র সৌন্দর্যহানির কারণ নয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, ঠিক কী কী কারণে চোখের নিচে ফোলাভাব বাড়তে পারে:
বয়স বাড়লে: সময়ের সাথে সাথে আমাদের ত্বকের কোলাজেন এবং ইলাস্টিন নামক প্রোটিনের উৎপাদন কমতে থাকে। এর ফলে চোখের চারপাশের চামড়া পাতলা ও স্থিতিস্থাপকতা হারাতে শুরু করে। এই কারণে চোখের নিচের অংশে তরল জমতে পারে এবং তা ফুলে যেতে পারে। বয়সজনিত কারণে এই সমস্যা হলে তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া কঠিন হলেও, সঠিক যত্নের মাধ্যমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
অ্যালার্জির কারণে: ঋতু পরিবর্তন, ধুলোবালি, পোষা প্রাণীর লোম বা অন্য কোনো অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে চোখের চারপাশে তার প্রভাব পড়তে পারে। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ায় চোখের চামড়া ফুলে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় চোখের চারপাশে চুলকানি, লালচেভাব এবং ফোলাভাব দেখা যায়।
কান্না করলে: দীর্ঘক্ষণ কান্নাকাটি করলে চোখের নিচের অংশে তরল জমা হতে পারে। আমাদের অশ্রুতে জল, লবণ ও এনজাইম থাকে। অতিরিক্ত অশ্রু নিঃসরণের ফলে চোখের চারপাশের ত্বক কিছুটা সংকুচিত ও জ্বালা অনুভব করতে পারে, যার কারণে চোখ ফুলে ও ভারী মনে হতে পারে।
ডিহাইড্রেশন হলে: শরীরে জলের অভাব বা ডিহাইড্রেশন চোখের নিচের অংশ ফুলে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণাক্ত খাবার ও অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে শরীরে জলের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে: মহিলাদের শরীরে বিভিন্ন সময়ে হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তিত হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো সাধারণত ঋতুস্রাব, মেনোপজ এবং গর্ভাবস্থার সময় বেশি ঘটে। হরমোনের এই ওঠানামার কারণে শরীরে জল ধারণের প্রবণতা বাড়ে, যার ফলে চোখ ফুলে যেতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে: সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। ঘুমের অভাব হলে শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যা চোখের নিচের রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করে এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে: নিয়মিত ধূমপান ও অ্যালকোহল পান করার ফলে শরীরে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। ডিহাইড্রেশন চোখের নিচের ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে ফোলাভাব বাড়াতে সহায়ক। এছাড়াও, এই অভ্যাসগুলো ত্বকের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলে।
চোখের নিচের ফোলাভাব দূর করার উপায়:
চোখের নিচের ফোলাভাব কমাতে কিছু সহজ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
পর্যাপ্ত জল পান: সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে এবং চোখের নিচের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি এবং এটি চোখের নিচের ফোলাভাব কমাতেও সহায়ক।
ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার: ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করা ডিহাইড্রেশন কমাতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ঠান্ডা শেক: চোখের নিচের অংশে ঠান্ডা টি ব্যাগ বা বরফের টুকরো কাপড়ে মুড়ে আলতো করে লাগালে ফোলাভাব কমতে পারে।
যদি চোখের নিচের ফোলাভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এর সাথে অন্য কোনো উপসর্গ যেমন ব্যথা, লালচেভাব বা দৃষ্টি ঝাপসা হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটি কোনো অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।