আমেরিকায় কাজ করা প্রায় অসম্ভব! H-1B ভিসার আবেদন ফি বাড়িয়ে ৯০ লক্ষ টাকা করলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন একটি সিদ্ধান্তে এইচ-ওয়ানবি (H-1B) ভিসা পাওয়ার পথ এখন অনেক বেশি দুর্গম হয়ে গেল। সম্প্রতি তিনি এমন একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার ফলে এখন থেকে এইচ-ওয়ানবি ভিসার আবেদনকারীকে প্রতি বছর ১ লক্ষ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা) ফি দিতে হবে। এই নিয়ম নতুন এবং পুরোনো, সব ভিসার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

এই কঠোর সিদ্ধান্তের ফলে গুগল, মেটা, অ্যামাজনের মতো বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর পক্ষেও দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগ করা কঠিন হবে। একইসঙ্গে, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে কর্মরত ভারতীয়রাও সমস্যায় পড়বেন।

‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি বারবার অভিযোগ করেছেন যে, বিদেশিরা আমেরিকানদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে তিনি সরাসরি নিষেধাজ্ঞা না দিলেও, বিশাল অঙ্কের ফি ধার্য করে বিদেশি কর্মীদের জন্য আমেরিকায় কাজ করার পথ কার্যত বন্ধ করে দিলেন। এর ফলে মার্কিনি সংস্থাগুলো ভারতীয় বা অন্যান্য বিদেশিদের নিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ হারাবে।

নতুন নিয়মের প্রধান শর্তাবলী
অর্থপ্রদানের প্রমাণ: নিয়োগকর্তাদের অবশ্যই ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ফি জমা দেওয়ার প্রমাণ রাখতে হবে। যদি কোনো নিয়োগকর্তা এই অর্থ না দেন, তাহলে ভিসা আবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হবে।

বিদেশেও কার্যকর: এই নিয়মটি শুধুমাত্র আমেরিকার অভ্যন্তরে নয়, দেশের বাইরে থেকে এইচ-ওয়ানবি ভিসার জন্য আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

ব্যতিক্রম: কেবল বিরল ক্ষেত্রে, যখন কোনো আবেদন জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত, তখন তা ব্যতিক্রম হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভারতীয়রা
এই নতুন নীতির ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে ভারতীয় কর্মীদের ওপর। ইউএসসিআইএস (USCIS)-এর তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনুমোদিত এইচ-ওয়ানবি ভিসার ৭১% ভারতীয়দের হাতে গেছে। এই ফি ভারতীয় পেশাদারদের দুটি প্রধান গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করবে:

মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় পেশাদাররা।

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা, যারা সেখানে থাকতে এবং কাজ করতে চান।

বিবিসি-র ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় এইচ-ওয়ানবি ভিসাধারীদের প্রায় ৬৫% কম্পিউটার সম্পর্কিত চাকরিতে কাজ করেন এবং তাদের গড় বার্ষিক বেতন প্রায় ১,১৮,০০০ মার্কিন ডলার। নতুন ফি চালু হলে তাদের উপার্জনের একটি বড় অংশই ভিসা ফি মেটাতে চলে যাবে। এই আর্থিক চাপ অনেককেই আমেরিকা ছাড়তে বাধ্য করবে। পাশাপাশি, নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য সেখানে চাকরির সুযোগও কমে যাবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy