একটা সময়ের পর কর্মব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে অবসর যাপন করা স্বাভাবিক নিয়ম। তবে অনেকেই প্রথম দিকে এই অবসরকাল নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা করেন না। যখন বয়স বাড়ে, তখন আর্থিক ও অন্যান্য সমস্যা এসে ভর করে। আসলে জীবনের অনেকটা সময় আনন্দ ও ফুর্তিতে কেটে গেলেও, অবসরের পর দেখা যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনাই বাদ পড়ে গেছে। তাই চাকরি জীবন থেকেই কিছু ভুল এড়িয়ে চলা উচিত, না হলে অবসরকালে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ভুলগুলো সম্পর্কে-
১) শুধু EPF-এর উপর নির্ভরতা কমান
অনেকেই তাদের কর্মজীবনের সঞ্চয়ের প্রধান উৎস হিসেবে এমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট ফান্ড (EPF)-এর উপর নির্ভর করে থাকেন। বছরের পর বছর এই ফান্ডে টাকা জমা হওয়ায় তারা আর অন্য কোনো সঞ্চয়ের কথা ভাবেন না। তবে এই ধারণা মোটেও সঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, ইপিএফ-এর সুদের হার সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয় এবং বাজারের অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় তা কম হতে পারে। বাজারে আরও অনেক বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে যেখানে আপনি তুলনামূলকভাবে বেশি সুদ পেতে পারেন। তাই শুধু ইপিএফ-এর উপর নির্ভর না করে অন্যান্য লাভজনক বিকল্পও বিবেচনা করুন।
২) দেরিতে অর্থ সঞ্চয়ের ভুল পরিহার করুন
এমন অনেক মানুষ আছেন যারা কর্মজীবনের শুরুতে উপার্জন করা অর্থ অবাধে খরচ করেন। তাদের ধারণা থাকে যে টাকা জমানোর জন্য এখনও অনেক সময় বাকি আছে। তবে আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অর্থ সঞ্চয় শুরু করা উচিত। সময়ের সাথে সাথে আপনার সঞ্চিত অর্থ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে এবং একটা সময়ের পর আপনাকে আর ভবিষ্যতের আর্থিক পরিকল্পনা নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হয় না। তাই দেরিতে অর্থ সঞ্চয়ের ভুল ধারণা ত্যাগ করুন এবং আজ থেকেই সঞ্চয় শুরু করুন।
৩) স্বাস্থ্য বীমায় বিনিয়োগে আর দেরি নয়
সঞ্চয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ (যেমন ১০ শতাংশ) স্বাস্থ্য বীমায় বিনিয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই চাকরি পাওয়ার অনেক পরে স্বাস্থ্য বীমার গুরুত্ব অনুভব করেন এবং বিনিয়োগ শুরু করেন। তবে এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, অবসরকালে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অপ্রত্যাশিত খরচ একটি বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। একটি ভালো স্বাস্থ্য বীমা এই সময়ে আপনাকে আর্থিক সুরক্ষা দিতে পারে এবং মানসিক শান্তি এনে দিতে পারে। তাই কর্মজীবনের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য বীমায় বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
৪) দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় প্রকল্পের পরিকল্পনা করুন
মনে রাখবেন, অবসরের পর আপনার নিয়মিত আয়ের উৎস ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে শুরু করে। তাই কর্মজীবনে এমন সঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করুন যা দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা দেবে। এমনভাবে সঞ্চয় করুন যাতে অবসরের পরপরই আপনার সমস্ত সঞ্চিত অর্থ শেষ না হয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় প্রকল্প এমনভাবে নির্বাচন করুন যাতে অবসরের পরেও নিয়মিতভাবে অল্প হলেও বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় অথবা এমন বিকল্প বেছে নিন যা নিয়মিত আয়ের সুযোগ তৈরি করে।
৫) ভবিষ্যতের খরচ হিসাব করে সঞ্চয় করুন
বর্তমানে আপনার সংসারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে, আগামী দশ বছর পর এই খরচ আরও বাড়তে পারে। মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ভবিষ্যতের খরচ বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি হবে। তাই সঞ্চয় করার সময় ভবিষ্যতের সম্ভাব্য খরচ একটি হিসাব করে নেওয়া উচিত। সেই অনুযায়ী একটি দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং সেই লক্ষ্য অনুযায়ী অর্থ সঞ্চয় করুন।
অবসর জীবন প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা এবং উপরোক্ত ভুলগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে আপনি আপনার অবসর জীবনকে আর্থিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্ত রাখতে পারেন এবং একটি স্বস্তিদায়ক জীবন উপভোগ করতে পারেন। তাই চাকরি জীবনের শুরু থেকেই সচেতন হোন এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিন।