হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে চাইলে আপনার রান্নাঘরের তেলের ঝাঁপি পাল্টে ফেলুন! সয়াবিন তেলের পরিবর্তে নারকেল তেল খাওয়া শুরু করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু হৃদরোগের ভালো-মন্দের সঙ্গে নারকেল তেলের সম্পর্কটা ঠিক কী? সম্প্রতি ‘বিবিসি২ ট্রাস্ট মি আই অ্যাম ডক্টর’ সিরিজে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়মিত অল্প পরিমাণে নারকেল তেল খাওয়া শুরু করলে শরীরে উপকারি কোলেস্টেরল বা এইচডিএল-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বহুলাংশে বাড়িয়ে তোলে।
এর ফলে করোনারি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনই হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।
নারকেল তেলে প্রায় ৮৬ শতাংশ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার কারণে বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা ছিল এই তেল স্বাস্থ্যকর নয়। তবে বিবিসি২-এর প্রকাশিত রিপোর্ট সেই ভুল ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে। প্রায় ৯৪ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন অল্প পরিমাণে ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল খেলে শরীরে এইচডিএল বা উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শরীরে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব তো পড়েই না, বরং একাধিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন:
১. ওজন কমে:
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত? তাহলে নারকেল তেল আপনার ডায়েটে যোগ করতে ভুলবেন না! এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিড পেটে এবং সারা শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একইসঙ্গে এটি শরীরের মেটাবলিক রেট এতটাই বাড়িয়ে তোলে যে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও কমে যায়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে:
রোগমুক্ত জীবন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় নারকেল তেল অন্তর্ভুক্ত করুন। এতে উপস্থিত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল লিপিড, ল্যারিক অ্যাসিড, ক্যাপরিক অ্যাসিড এবং ক্যাপরাইলিক অ্যাসিড শরীরে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে ছোট-বড় কোনো রোগ সহজে কাছে ঘেঁষতে পারে না। এমনকি বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও হ্রাস পায়। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নারকেল তেলে বিদ্যমান উপকারি উপাদান ইনফ্লুয়েঞ্জা, সাইটোমেগালো ভাইরাস এবং এইচআইভি-এর মতো রোগ দূরে রাখতেও সহায়ক।
৩. হজম ক্ষমতার উন্নতি:
বিভিন্ন কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, হজম ক্ষমতার উন্নতিতে নারকেল তেলের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই তেলের অভ্যন্তরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান একদিকে যেমন পাচক রসের ক্ষরণ বাড়ায়, তেমনি নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফলে হজম ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এমনকি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রমের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও নারকেল তেল সহায়ক হতে পারে।
৪. দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:
দাঁতের সুরক্ষায় ক্যালকিউমিন নামক একটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারকেল তেল এই উপাদানটির সঠিক শোষণে সাহায্য করে। ফলে নারকেল তেল খাওয়া শুরু করলে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় এবং দাঁতে পোকা লাগার মতো রোগও দূরে থাকে।
৫. শরীরের সার্বিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি:
নারকেল তেলে উপস্থিত মিডিয়াম চেন ট্রাইগ্লিসারাইড এবং ফ্যাটি অ্যাসিড লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। একইসঙ্গে এটি কিডনি এবং অগ্নাশয়ে যাতে কোনো ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখে। এক কথায়, হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি শরীরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের খেয়াল রাখতে নারকেল তেল সত্যিই এক অসাধারণ উপাদান।
সুতরাং, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আপনার রান্নায় সয়াবিন তেলের পরিবর্তে নারকেল তেল ব্যবহার শুরু করতে পারেন। তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।