ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দিনের শুরুটা সঠিক খাবার দিয়ে করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ দিনের প্রথম খাবারই সারাদিন ধরে শরীরের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। রক্তে শর্করার মাত্রা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সকালের কিছু প্রচলিত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ডায়াবেটিস রোগীদের সকালে অবশ্যই বর্জনীয় এমন চারটি খাবার সম্পর্কে।
১. দুধ চা: অনেকের দিন এক কাপ দুধ চা দিয়ে শুরু হয়, কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি মোটেও উপকারী নয়। দুধে থাকা ল্যাকটোজ অনেকের জন্য হজম করা কঠিন হতে পারে, যা অন্ত্রে গাঁজন (ফার্মেন্টেশন) ঘটিয়ে পেট ফাঁপা, গ্যাস এবং ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। উপরন্তু, দুধে থাকা কেসিন নামক প্রোটিন অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে এবং সম্ভাব্যভাবে বিষাক্ত পদার্থকে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে দেয়। এই সব প্রভাবই রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণকে আরও জটিল করে তোলে।
২. ফলের রস (প্যাকেজড): প্যাকেটজাত ফলের রসকে স্বাস্থ্যকর মনে হলেও, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি বড় ফাঁদ। এসব রসে কোনো ফাইবার থাকে না। ফাইবার ছাড়া ফলের চিনি দ্রুত রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে, যার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যায়। এর পরপরই সাধারণত ‘ক্র্যাশ’ হয়, যা চরম ক্লান্তি, তীব্র ক্ষুধা এবং আরও চিনি খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। এই চক্র ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কোনোভাবেই সাহায্য করে না। টাটকা ফল খেলেও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
৩. খালি পেটে রুটি (পরিশোধিত): পরিশোধিত ময়দা দিয়ে তৈরি রুটি সকালের নাস্তার একটি প্রধান উপাদান হতে পারে, কিন্তু যারা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের জন্য এটি আদর্শ নয়, বিশেষ করে খালি পেটে। পরিশোধিত স্টার্চ দ্রুত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়, যা রক্তে শর্করার আকস্মিক বৃদ্ধি ঘটায়। এই হঠাৎ বৃদ্ধি দিনের বাকি সময় রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করতে পারে এবং হজমের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর পরিবর্তে, আটার রুটি বা ওটস জাতীয় শস্য খাওয়া যেতে পারে, যা ধীরে ধীরে হজম হয়।
৪. ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক (দোকান থেকে কেনা): ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকগুলো সাধারণত স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে বাজারজাত করা হয়, বিশেষ করে ব্যায়ামের পর শরীরকে সতেজ করার জন্য। কিন্তু দোকান থেকে কেনা এ ধরনের পানীয়গুলোতে সুক্রালোজের মতো কৃত্রিম মিষ্টি থাকতে পারে। এই কৃত্রিম মিষ্টিগুলো অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে (উপকারী ব্যাকটেরিয়া) ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে হজমের সমস্যা হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করে, বিশেষ করে যদি খালি পেটে খাওয়া হয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এসব পানীয় পরিহার করা উচিত। এর বদলে পর্যাপ্ত পানি বা প্রাকৃতিক, চিনিমুক্ত পানীয় পান করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেছেন, ডায়াবেটিস রোগীদের সকালে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন এবং জটিল কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত, যা সারাদিন রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।