বিয়ে মানেই দুটি হৃদয়ের মিলন। আমাদের সমাজে বিয়ের আগে কোষ্ঠী বিচার বা গোত্র মেলানোর চল থাকলেও, রক্তের গ্রুপ (Blood Group) নিয়ে সচেতনতা এখনও অনেক কম। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, স্বামী-স্ত্রীর ব্লাড গ্রুপ আলাদা হলে কি দাম্পত্যে প্রভাব পড়ে? কিংবা গর্ভাবস্থায় কি কোনো জটিলতা তৈরি হতে পারে? চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে জেনে নিন আসল সত্য।
সম্পর্কের ওপর কি প্রভাব ফেলে? সোজা কথায় বলতে গেলে, রক্তের গ্রুপের সঙ্গে বৈবাহিক সুখ, ভালোবাসা বা পারস্পরিক বোঝাপড়ার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। জাপানের মতো কিছু দেশে ব্লাড গ্রুপ দেখে ব্যক্তিত্ব বিচারের প্রথা থাকলেও তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। অর্থাৎ, আপনাদের ব্লাড গ্রুপ আলাদা হলেও সুখে সংসার করতে কোনো বাধা নেই।
গর্ভাবস্থায় কেন রক্ত পরীক্ষা জরুরি? বিবাহিত জীবনে রক্তের গ্রুপ তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন দম্পতি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এখানে মূল ভূমিকা পালন করে ‘Rh ফ্যাক্টর’ (পজিটিভ বা নেগেটিভ)।
-
ঝুঁকি কোথায়? যদি মায়ের রক্তের গ্রুপ হয় Rh-নেগেটিভ (–) এবং বাবার গ্রুপ হয় Rh-পজিটিভ (+), তবে গর্ভস্থ শিশুটি পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
-
সমস্যা কী? এক্ষেত্রে মায়ের শরীর শিশুর রক্তকে বাইরের শত্রু ভেবে ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরি করতে পারে। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম থাকলেও, দ্বিতীয় গর্ভাবস্থায় এই অ্যান্টিবডি শিশুর রক্তাল্পতা বা জন্ডিসের মতো মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
ভয়ের কিছু নেই, আছে সমাধান: বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। গর্ভাবস্থার শুরুতেই রক্ত পরীক্ষা করে সমস্যা ধরা পড়লে চিকিৎসকরা অ্যান্টি-ডি (Anti-D) বা RhoGAM ইনজেকশন দেন। এটি মা ও শিশু উভয়কেই সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রাখে এবং একটি সুস্থ শিশুর জন্ম নিশ্চিত করে।
স্বামী-স্ত্রী কি একে অপরকে রক্ত দিতে পারেন? এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে তাঁদের গ্রুপের সামঞ্জস্যের ওপর। যেমন:
-
O-নেগেটিভ: যে কাউকে রক্ত দিতে পারেন (Universal Donor)।
-
AB-পজিটিভ: যে কারও থেকে রক্ত নিতে পারেন (Universal Recipient)। জরুরি প্রয়োজনে এটি কাজে লাগতে পারে, তবে একে বিয়ের শর্ত করা উচিত নয়।
উপসংহার: রক্তের গ্রুপ বিয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়। তবে নিরাপদ মাতৃত্ব এবং সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য বিয়ের আগে বা সন্তান নেওয়ার আগে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই ব্লাড গ্রুপ জেনে রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।