অকালমৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে হৃদরোগ আজ শীর্ষে। তাই হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করা এখন সকলের জন্যই জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, এটা আমরা জানি। তবে এমন কিছু সাধারণ অভ্যাস রয়েছে যা নীরবে আপনার হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ধ্বংস করছে, অথচ আমরা সেগুলোকে স্বাভাবিক বলেই মনে করি। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই অভ্যাসগুলো:
১. ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা ও টিভি দেখা:
দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে থাকা, এমনকি যদি আপনি নিয়মিত ব্যায়ামও করেন, তবুও হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে নড়াচড়া না করার ফলে রক্তে চর্বি এবং সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই একটানা বেশিক্ষণ বসে থাকা পরিহার করুন।
২. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক অবসাদের চিকিৎসা না করানো:
মানসিক চাপ, বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব বা অবসাদ আপনার হৃৎপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর। মানসিক চাপ চেপে রাখলে তা শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সামাজিক মেলামেশা বৃদ্ধি করুন, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সময় কাটান এবং মানসিক অবসাদে ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসা করান।
৩. নাক ডাকার সমস্যা ফেলে না রাখা:
নাক ডাকা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। এই রোগের কারণে ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট হয়, যা রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই নাক ডাকার সমস্যাকে গুরুত্ব দিন এবং দ্রুত এর সমাধান করুন।
৪. দাঁতের মাড়ির অপরিষ্কার:
গবেষণায় দেখা গেছে, দাঁতের মাড়ির রোগের সাথে হৃদরোগের একটি শক্তিশালী যোগসূত্র রয়েছে। মাড়ি পরিষ্কার না করলে দাঁতের গোড়ায় ব্যাকটেরিয়ার স্তর জমে দেহে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা আপনার হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি মাড়ির যত্ন নিন।
৫. অতিরিক্ত মদ্যপান:
অতিরিক্ত মদ্যপান উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। রক্তে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যা হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিওরের কারণ হতে পারে। এছাড়াও, মদে থাকা অতিরিক্ত ক্যালোরি ওজন বাড়ায়, যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য আরও একটি ঝুঁকি তৈরি করে। তাই মদ্যপান পরিহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৬. অতিভোজন:
অতিরিক্ত ওজন হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় বিপদ। তাই অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। মিষ্টি পানীয়ের পরিবর্তে জল পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন।
৭. লাল মাংসের আধিক্য:
লাল মাংসে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস খেলে হৃদরোগ এবং মলাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি আরও বাড়ে। তাই লাল মাংসের পরিমাণ কমিয়ে মাছ বা মুরগির মাংসের মতো স্বাস্থ্যকর প্রোটিন বেছে নিন।
এই সাধারণ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে আপনি আপনার হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং অকালমৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সক্ষম হবেন। নিজের প্রতি যত্নশীল হোন, সুস্থ থাকুন।