ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত রোগ, যা এডিস ইজিপ্টি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার কামড়ে ছড়ায়। প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাই এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ডেঙ্গু মশার বৈশিষ্ট্য ও এর কামড় থেকে বাঁচার উপায় জানা থাকলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গু মশা চেনার উপায় ও প্রতিরোধের কিছু সহজ টিপস।
ডেঙ্গু মশার বৈশিষ্ট্য:
সক্রিয় সময়: ডেঙ্গু মশা সাধারণত দিনের বেলা সক্রিয় থাকে, বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে।
আকর্ষণের কারণ: এই মশা মানুষের ঘাম, শরীরের উষ্ণতা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের গন্ধে আকৃষ্ট হয়।
লুকানোর স্থান: ডেঙ্গু মশা ঘরের অন্ধকার কোণে, আসবাবপত্রের পিছনে, তাক বা আলমারির আড়ালে লুকিয়ে থাকে।
প্রজনন স্থান: এডিস মশা পরিষ্কার জমে থাকা জলে ডিম পাড়ে। তাই বাড়ির আশেপাশে জল জমতে দেওয়া উচিত নয়।
ডেঙ্গু মশা থেকে বাঁচার উপায়:
১. পোশাকের মাধ্যমে সুরক্ষা:
লম্বা হাতার শার্ট, প্যান্ট, মোজা এবং পা ঢাকা জুতো পরুন।
হালকা রঙের পোশাক পরিধান করুন, কারণ গাঢ় রঙের পোশাকে মশা বেশি আকৃষ্ট হয়।
২. মশা নিরোধক ব্যবহার:
হাত, পা এবং অন্যান্য খোলা ত্বকে মশা নিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
ঘরের ভিতরে মশা তাড়ানোর জন্য ইলেকট্রিক ম্যাট বা কয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
৩. ঘর সুরক্ষিত রাখুন:
জানালা ও দরজায় মশারি বা পর্দা লাগান।
দিনের বেলা জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন, বিশেষ করে সকাল ও বিকেলের সময়ে।
৪. জল জমতে না দেওয়া:
বাড়ির আশেপাশে কোথাও জল জমতে দেওয়া উচিত নয়। ফুলদানি, টায়ার, বালতি, ড্রাম ইত্যাদিতে জমে থাকা জল নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
এয়ার কুলার, ফ্রিজের নিচে এবং অন্যান্য জায়গায় জমে থাকা জল ফেলে দিন।
৫. মশার ডিম ধ্বংস করুন:
বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা জলে কেরোসিন বা মশা নাশক ওষুধ ছিটিয়ে দিন।
জলাধার বা ট্যাঙ্কের মুখ ঢেকে রাখুন যাতে মশা ডিম পাড়তে না পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ:
উচ্চ জ্বর (১০৪°F পর্যন্ত)।
মাথাব্যথা ও চোখের পিছনে ব্যথা।
পেশি ও হাড়ে তীব্র ব্যথা।
ত্বকে লাল র্যাশ বা দাগ দেখা দেওয়া।
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
কী করবেন?
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন এবং বিশ্রাম নিন।
প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করবেন না।
সচেতনতা:
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এবং মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করুন।
আরও পড়ুন:
মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের সহজ উপায়
ডেঙ্গু জ্বর: লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
ডেঙ্গু মশা থেকে সতর্ক থাকুন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন। সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তার রোধ করতে।