অসহ্য পেটে ব্যথা? জানুন এর কারণ কী কী

পিরিয়ড শুরুর আগে হালকা পেট ব্যথা অনেক নারীর কাছেই পরিচিত সমস্যা। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এই ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে ওষুধ ছাড়া উপায় থাকে না। যদি টানা এই সমস্যা চলতে থাকে, তাহলে আর ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ভারতের গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ পলি চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এমন পরিস্থিতিতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং ল্যাপারোস্কোপি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। পরীক্ষায় যদি জরায়ুর ভেতরের আবরণের (এন্ডোমেট্রিয়াম) পুরু হয়ে যাওয়ার প্রমাণ মেলে, তবে বুঝতে হবে রোগী এন্ডোমেট্রিয়োসিসে আক্রান্ত।

এন্ডোমেট্রিয়োসিস কী?

জরায়ুর ভেতরের দিকের দেয়ালের মিউকাসের আবরণ বা টিস্যুর স্তরকে এন্ডোমেট্রিয়াম বলা হয়। যখন এই টিস্যুর স্তর জরায়ুর ভেতরে তৈরি না হয়ে বাইরে, যেমন ডিম্বাশয়, অন্ত্র বা পেলভিসের টিস্যুর স্তরে তৈরি হয়, তখন তাকে এন্ডোমেট্রিয়োসিস বলা হয়। এই ত্রুটির কারণে তলপেটে অসহ্য ব্যথা সৃষ্টি হয়। এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু কদাচিৎ পেলভিসের বাইরেও ছড়াতে পারে। এই রোগ সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এন্ডোমেট্রিয়োসিসের লক্ষণ:

১. অতিরিক্ত ঋতুস্রাব: এই রোগের অন্যতম প্রধান উপসর্গ হল অস্বাভাবিক পরিমাণে ঋতুস্রাব। কারো কারো ক্ষেত্রে রক্তপাত এতটাই বেশি হয় যে ঋতু চলাকালীন স্বাভাবিক জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ে।

২. তলপেটে তীব্র ব্যথা: ঋতু শুরুর কয়েক দিন আগে থেকে তলপেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হয় এবং ঋতু চলাকালীনও তা বজায় থাকে।

৩. কোমরে ব্যথা ও রক্ত স্বল্পতা: কোমরেও তীব্র ব্যথা অনুভব হতে পারে। অতিরিক্ত রক্তস্রাবের কারণে শরীরে রক্ত স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।

৪. শারীরিক ও মানসিক অবসাদ: কোনো কাজ করতে ইচ্ছে না করা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া এবং অবসাদে ভোগা এই রোগের সাধারণ লক্ষণ।

৫. অন্যান্য উপসর্গ: বমি হওয়া, ক্ষুধামন্দা এবং যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডা. পলি চট্টোপাধ্যায় আরও জানান, অনেক সময় এন্ডোমেট্রিয়োসিস থাকলেও তেমন কোনো সুস্পষ্ট উপসর্গ থাকে না। অন্য কোনো কারণে পরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগটি ধরা পড়ে।

রোগের পর্যায় অনুযায়ী, ‘স্টেজ-১’ বা ‘স্টেজ-২’ অবস্থায় তেমন অসুবিধা না হলেও, ‘স্টেজ-৩’ বা ‘স্টেজ-৪’-এ পৌঁছে গেলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি রক্তপাত হয়। এমনকি কিছুটা রক্ত পেটের মধ্যেও জমা হতে শুরু করে। এই জমা রক্ত ধীরে ধীরে চকোলেট সিস্টে পরিণত হয় এবং ঋতুস্রাবের আগে থেকে ভয়ানক ব্যথা সৃষ্টি করে।

তবে শুরুতে এন্ডোমেট্রিয়োসিস ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হল হরমোনের ওষুধ। রোগের তীব্রতা বাড়লে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এন্ডোমেট্রিয়োসিস এমন একটি রোগ যা সম্পূর্ণরূপে সারানো সম্ভব নয়। তবে চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চললে ডায়াবিটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো ওষুধের সাহায্যে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

আশার খবর হল, এন্ডোমেট্রিয়োসিস রোগের প্রতিষেধক টিকা তৈরির জন্য বর্তমানে গবেষণা চলছে। চিকিৎসকদের আশা, আগামী দিনে টিকার মাধ্যমে এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তাই পিরিয়ডের সময় অসহ্য ব্যথাকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy