খাবারকে আরও সুস্বাদু করে তোলার জন্য আজকাল দেদারসে ব্যবহার করা হচ্ছে টেস্টিং সল্ট। নুডলস থেকে শুরু করে চিপস, ফাস্টফুড এবং চাইনিজ খাবারের প্রায় সব পদেই এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এমনকি আধুনিক গৃহিণীরাও এখন নেট ঘেঁটে রেসিপি দেখে খাবারে যোগ করছেন এই কৃত্রিম স্বাদ বৃদ্ধিকারী উপাদানটি। তবে টেস্টিং সল্ট নিয়ে বিশ্বব্যাপী একাধিক গবেষণার পর বিশেষজ্ঞরা একে ভয়ানক নীরব ঘাতক হিসেবে আখ্যায়িত করছেন!
পাশ্চাত্যের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এমনও বলা হয়েছে যে, টেস্টিং সল্টের আগ্রাসন বিশ্বজুড়ে অ্যালকোহল ও নিকোটিনের চেয়েও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। শুধু তাই নয়, টেস্টিং সল্ট নানা উপায়ে আমাদের মস্তিষ্কেরও মারাত্মক ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম।
অন্যদিকে, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, টেস্টিং সল্টের প্রতিক্রিয়ায় তীব্র মাথাব্যথা, হজমযন্ত্রের গোলযোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, খিঁচুনিসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা এমনকি দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
আসুন, এবার জেনে নেওয়া যাক টেস্টিং সল্ট আমাদের দেহের ঠিক কী কী ক্ষতি করে:
শিশুদের জন্য ভয়াবহ: শিশুদের অত্যন্ত পছন্দের খাবার চিপস। এতে মেশানো হয় ঝাঁঝালো স্বাদযুক্ত টেস্টিং সল্ট। এছাড়াও প্যাকেটজাত স্যুপ, নুডলস, সসেজ, চানাচুর, ডাল ভাজা এবং বিস্কুটের মতো বহু শুকনো খাবারেও দেদারসে মেশানো হচ্ছে এই ক্ষতিকর উপাদানটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই টেস্টিং সল্টযুক্ত খাবার পরিণত বয়স্ক মানুষের তুলনায় শিশুদের মস্তিষ্কের কোষকে দ্রুত নিষ্ক্রিয় ও অবসন্ন করে দিতে পারে।
চাইনিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম: পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর যদি কারও তীব্র মাথাব্যথা, বমি ভাব, খিঁচুনি, চামড়ায় ফুসকুড়ি, হাত-পায়ে দুর্বলতা ও কাঁপুনি, বুকে চাপ, অবসাদ, ঝিমুনিভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়, তবে বুঝতে হবে এটি টেস্টিং সল্টের প্রতিক্রিয়ার ফল। একে ‘চাইনিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম’ও বলা হয়ে থাকে।
মনোযোগ ও মেজাজের উপর প্রভাব: টেস্টিং সল্টযুক্ত খাবার গভীর মনোযোগে কাজ করার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে এবং মেজাজ তিরিক্ষি করে তুলতে পারে। টেস্টিং সল্টে থাকা এক্সাইটোটক্সিন বা উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বিষাণু শরীরের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে তোলে। যার ফলে তীব্র মাথাব্যথা এমনকি গর্ভবাত পর্যন্ত হতে পারে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য ঝুঁকি: গর্ভবতী মায়ের খাবারে অতিমাত্রায় টেস্টিং সল্টের ব্যবহার হলে অনাগত সন্তানের অটিজম, মস্তিষ্কের রোগ ও বুদ্ধিবৃত্তিক অসম্পূর্ণতা নিয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি: গত তিন দশকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে টেস্টিং সল্টযুক্ত খাবারের দিকেই আঙুল তুলেছেন অনেক গবেষক।
স্নায়ুকোষ ধ্বংসকারী: প্রচুর পরিমাণে টেস্টিং সল্টযুক্ত টমেটো সস, সয়া সসের মতো খাবার মানুষের স্নায়ুকোষকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ: বিশেষজ্ঞদের মতে, টেস্টিং-সল্ট মেদস্থূলতা, মস্তিষ্কের নানারকম রোগসহ মস্তিষ্কের ক্যান্সার, মলাশয় ও স্তন ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, পার্কিনসন্স্, আলঝেইমার্স, ফাইব্রোমায়েলজিয়া, গেঁটে বাত, অনিদ্রা, বিষণ্নতা ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি: টেস্টিং সল্টের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন রকম অ্যালার্জি, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
খাদ্যপণ্য কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে ভালোভাবে এর উপাদানগুলো দেখে নিন। তাতে টেস্টিং সল্টের উল্লেখ আছে কি না, থাকলে কি পরিমাণ রয়েছে তা জেনে নিয়ে তবেই খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিন। অনেক সময় প্যাকেটের গায়ে টেস্টিং সল্ট শব্দটি সরাসরি উল্লেখ না থেকে তার পরিবর্তে লেখা থাকে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট অথবা আরও সংক্ষেপে এমএসজি। আসলে যে নামেই লেখা থাকুক না কেন, জিনিস কিন্তু একই।
এছাড়াও কোনো খাবার মুখে দিলে যদি একটি ঝাঁঝালো নোনা স্বাদ পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটি টেস্টিং সল্টেরই কারসাজি। তাই সকলেরই এই স্বাদের খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। নয়তো এর হাত ধরেই শরীরে বাসা বাঁধতে পারে বড় ধরনের কোনো রোগ। তাই সাবধান থাকুন, সচেতন থাকুন।