মেটাবলিক রেট বাড়ানোর রাস্তা খুঁজছেন? হাতের কাছেই রয়েছে উপায়, জেনেনিন

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের সংজ্ঞা অনুযায়ী, যে কোনও জীবের বেঁচে থাকা ও বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ করার জন্য যেটুকু এনার্জির প্রয়োজন হয়, তা পাওয়া যায় খাবার থেকে। শরীর কত তাড়াতাড়ি খাবারটাকে ভেঙে এনার্জিতে পরিণত করবে, তা নির্ভর করে আপনার বিপাক বা মেটাবলিজ়মের উপর। শরীর যখন বিশ্রাম নেয়, তখনও কিন্তু বিপাক চলতে থাকে। কর্মক্ষম ও বিশ্রামরত অবস্থায় কতটা বিপাক ক্রিয়া হচ্ছে, তার গড় হিসেব হচ্ছে মেটাবলিক রেট বা বিপাকের হার। যাঁর মেটাবলিক রেট যত বেশি, তিনি তত বেশি ফ্যাট বার্ন করেন। যথাযথ এক্সারসাইজ় আর ডায়েটের সাহায্যে মেটাবলিক রেটের হার বাড়ানো যায়। ‘‘তবে একটা কথা খেয়াল রাখবেন, ওজন বাড়ার জন্য কিন্তু কেবল বিপাকের স্লথ গতিই দায়ী নয়, থাইরয়েড, সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, স্ট্রেস, প্রাকৃতিক গোলযোগ ইত্যাদি নানা কারণে ওজন বাড়তে পারে। আপনার ক্ষেত্রে এর মধ্যে কোনটি দায়ী, সেটা খুঁজে বের করুন। তা হলে ওজন কমানো সহজ হবে,’’ বলছেন পুষ্টিবিদ লাভনীত বাত্রা।

অ্যাক্টিভিটি বাড়ান
মেটাবলিক রেট বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ রাস্তা হচ্ছে কাজের পরিমাণ বাড়ানো। স্বনামধন্য হোলিস্টিক ফিটনেস এক্সপার্ট ও গ্রন্থকার ভেসনা জেকব বলছেন, ‘‘এক্সারসাইজ়ের সাহায্যে বিপাকের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা যাঁদের আছে তাঁরা জেনে রাখুন, আপনি কী কী ব্যায়াম করছেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কীভাবে সেই ব্যায়ামগুলি করছেন।’’ যাঁরা এখনও পুরো বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করতে পারেননি, তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাই, নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার পেশির কোষগুলির মধ্যে নতুন মাইটোকনড্রিয়া জন্মানোর হার বাড়ে, সেগুলির বাড়বৃদ্ধিও সুনিশ্চিত হয়। তাই আপনার শরীর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি এনার্জিও খরচ করে, এমনকী যখন আপনি ঘুমোচ্ছে, তখনও। নিয়মিত স্ট্রেংথ ট্রেনিং আর কার্ডিওভাস্কুলার ব্যায়াম করলে দু’টি দিকই বজায় রাখা সম্ভব হবে। স্কোয়াটস, প্ল্যাঙ্কস, হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিংও অভ্যেস করতে পারেন। শুরু করুন 25টি স্কোয়াটসের তিনটি সেট দিয়ে, প্রতিবার স্কোয়াট পজ়িশন দু’ সেকেন্ডের জন্য হোল্ড করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। প্ল্যাঙ্ক যখন করবেন তখন এক মিনিট হোল্ড করে তিনটি সেট অভ্যেস করুন। এই সময়ে পিঠ একদম সোজা থাকবে, আর্চ হবে না। হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং অবশ্যই ট্রেনারের পরামর্শ নিয়ে করুন, তা না হলে কিন্তু চোট-আঘাত লাগার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যাঁরা প্রথমবার ব্যায়াম শুরু করছেন, তাঁরা স্লো রানিং বা সাঁতার দিয়ে স্টার্ট করতে পারেন। হার্ট রেট হঠাৎ করেই বাড়তে দেবেন না। এমন চালে দৌড়োন যা করতে করতে কথা বলা যায়। সকালবেলা কুইক কার্ডিয়ো করতে পারলেও খুব কাজে দেয়, তবে এটিও পেশাদারের পরামর্শ নিয়ে তবেই করার পরামর্শ দিচ্ছেন ভেসনা।

সঠিক খাবারের প্রয়োজনীয়তা
আপনি সারা দিনে কী খাচ্ছেন এবং ঠিক কীভাবে খাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে ঠিক কতটা এনার্জি পুড়বে। খাবার হজম করার জন্য শরীরের বেশ খানিকটা এনার্জি খরচ হয়। তাই কী খাবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেকটা চিন্তাভাবনা করে দেখা উচিত। ভেসনা তো বটেই, আরও অনেক ফিটনেস এক্সপার্টই ইদানীং ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের উপর খুব জোর দিচ্ছেন। সপ্তাহে অন্তত দু’বার 8-12 ঘণ্টা উপবাস করলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমে, বাড়ে গ্রোথ হরমোনের পরিমাণ। যাঁরা পুরো উপোস করতে পারছেন না, তাঁরা এই সময়টায় গ্রিন টি বা উষ্ণ জল পান করতে পারেন। খুব ভালো হয় রাতের খাওয়া তাড়াতাড়ি শেষ করে পরের দিনের প্রথম খাবার বারো ঘণ্টা পর খেলেও। অনেকে ব্রেকফাস্টে ফলের রস, দুপুরে ক্লিয়ার স্যুপ আর রাতে সবজি সেদ্ধ খেয়েও ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করেন। তবে রোজ ট্রাই করতে গেলে কিন্তু বিপদ হতে পারে।

নিউট্রিশনিস্ট ও সার্টিফায়েড মেটাবলিক ব্যালেন্স কোচ তরণজিৎ কৌর বলছেন, ‘‘জল না খেলে কিন্তু কিছুতেই মেটাবলিক রেট বাড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। আপনার ওজন কত সেটা দেখে নিন, প্রতি কেজি ওজনপিছু মোটামুটি 35 মিলি করে জল খাওয়া আবশ্যক।’’

আপনার খাদ্যতালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন আর মিনারেল আছে কিনা সেটাও দেখে নিতে হবে। যদি খাদ্যতালিকা থেকে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মতো মিনারেল আর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া না যায়, তা হলেই একমাত্র সাপ্লিমেন্টের সাহায্য নিতে পারেন। তরণজিৎ বলছেন, ‘‘ডিম, মাছ, ডাল, স্প্রাউটস, টোফু আর বাদামে প্রচুর প্রোটিন মেলে।’’

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy