প্রায়ই মুড সুইং হচ্ছে? এর ফল হতে পারে বিপজ্জনক! জেনে নিন নিয়ন্ত্রণের উপায়

কমবেশি আমরা অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকি। সকালে হয়তো মনটা বেশ ফুরফুরে ছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই মন খারাপ! কোনো কারণ খুঁজে না পেয়েও খারাপ লাগতে শুরু করে। আবার অনেক সময় সামান্য কারণে হুট করে রেগে যাই।

এর মানে হলো, আপনার ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন ঘটছে, যাকে এক কথায় মুড সুইং বলা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হয়, তাদের মস্তিষ্ক খুব দ্রুত যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমনকি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনাও তারা তাৎক্ষণিকভাবে করতে সক্ষম হন। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই সুবিধাটি সবার ক্ষেত্রে একরকম হয় না। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই বারবার মেজাজ পরিবর্তন হওয়ার ফলস্বরূপ নানান নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়।

মনোবিদরা বলছেন, মুড সুইংয়ের সমস্যার সমাধান যদি শুরুতেই না করা হয়, তবে তা বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা দ্বৈত স্বত্বার মতো জটিল ও গভীর মানসিক রোগে পর্যন্ত গড়াতে পারে।

যেসব কারণে মুড সুইং হয়ে থাকে:

আমাদের মস্তিষ্কে বেশ কিছু নিউরোট্রান্সমিটার থাকে, যা থেকে হরমোন ক্ষরণ হয়। এই হরমোনগুলোর মধ্যে সেরোটোনিন ও নরপাইনফ্রাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেরোটোনিন আমাদের ঘুমের ধরন, বিভিন্ন মানসিক স্থিতি ও আবেগের ওঠাপড়ার সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে, নরপাইনফ্রাইনের সম্পর্ক স্মৃতি, শেখার দক্ষতা ও শারীরিক চাহিদার সঙ্গে। এই হরমোনগুলোর ভারসাম্যহীনতার কারণে মুড সুইং হতে পারে।

এছাড়াও মানসিক চাপ, উদ্বেগ (অ্যাংজাইটি), বিষণ্নতা (অবসাদ বা ডিপ্রেশান), মদ্যপান, ঘুমের অভাব, বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা দ্বৈত সত্ত্বা, প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS), কাজের চাপসহ বিভিন্ন কারণে মুড সুইং হতে পারে।

যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন:

মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে:

১. পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে: প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। ঘুমের অভাব মুড সুইংকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

২. পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে: প্রতিদিন ৩-৪ লিটার জল পান করা শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। ডিহাইড্রেশন মেজাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৩. সঠিক ডায়েট মেনে চলতে হবে: সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফাস্ট ফুড ও চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত।

৪. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে: নিয়ম করে খাওয়া, সময়মতো ঘুমানো এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করা জরুরি।

৫. নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে: শারীরিক কার্যকলাপ মনকে প্রফুল্ল রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করা উচিত।

মুড সুইংয়ের কারণে অতিরিক্ত রাগ কিংবা নেতিবাচক অনুভূতি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যদি এই সমস্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে, তাহলে দ্রুত একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে মুড সুইংকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy