ছেলেবেলার সেই দড়ি লাফ! ওজন কমাতে ও ফিট থাকতে আজও সুপারহিট!
ছেলেবেলায় স্কিপিং বা দড়ি লাফ খেলেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সেই সাদামাটা দড়ি লাফানোই আজকাল একটি অসাধারণ ব্যায়াম হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, ওজন কমাতে এবং শরীরের ঘাম ঝরাতে দড়ি লাফের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন।
আসুন জেনে নিই, দড়ি লাফানোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সম্পর্কে:
১. কার্যকর কার্ডিও ও হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভেল ট্রেনিং: দড়ি লাফানো একটি চমৎকার কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম এবং এটি হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভেল ট্রেনিং (HIIT)-এর একটি ভালো উদাহরণ।
২. চর্বি ঝরাতে অতুলনীয়: দেহের অতিরিক্ত চর্বি ঝরানোর জন্য দড়ি লাফের জুড়ি মেলা ভার। দৌড়ানোর চেয়েও স্কিপিং বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে সক্ষম। এক ঘণ্টা স্কিপিং প্রায় ১৩০০ ক্যালোরি খরচ করতে সাহায্য করে।
৩. পেশি টোন করে: নিয়মিত দড়ি লাফানো শরীরের মাংসপেশিকে টোন করতে সহায়ক।
৪. সমন্বয় ও ভারসাম্য বৃদ্ধি: এই ব্যায়াম হাত ও পায়ের সমন্বয় সাধন করে এবং শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। এ কারণেই অনেক অ্যাথলেট তাদের ট্রেনিং রুটিনে স্কিপিং অন্তর্ভুক্ত করেন।
৫. শারীরিক সামঞ্জস্য রক্ষা: শরীরের সামগ্রিক সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম।
৬. ফুল বডি ওয়ার্কআউট: দড়ি লাফানোর সময় পুরো শরীরের মুভমেন্ট হয়। এটি থাইয়ের পেশি টানটান করতে বিশেষভাবে কার্যকর, এমনকি হাতের মাংসপেশিকেও শক্তিশালী করে।
৭. হিপের পেশি শক্তিশালী করে: এটি হিপের মাংসপেশিকে টানটান ও শক্তিশালী করে তোলে।
৮. জয়েন্টের উপর কম চাপ: গবেষণায় দেখা গেছে যে, দৌড়ানোর তুলনায় স্কিপিং জয়েন্টের উপর অনেক কম চাপ সৃষ্টি করে। তাই দৌড়ানোর চেয়ে স্কিপিং অনেক ভালো ব্যায়াম হিসেবে বিবেচিত হয়।
৯. কার্ডিওভাস্কুলার ব্যায়ামের বিকল্প: স্কিপিং করার সময় হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, তাই এটি আলাদাভাবে কার্ডিওভাস্কুলার এক্সারসাইজের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়।
১০. হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি: এই ব্যায়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে।
১১. সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী: বাইরে দৌড়াতে যাওয়ার আলস্য বা খারাপ আবহাওয়া আপনার ফিটনেস রুটিনে বাধা হতে পারবে না, কারণ একটি দড়ি হাতের কাছে থাকলেই হলো। এটি ব্যায়ামের সবচেয়ে সস্তা উপায়।
১২. সব স্তরের জন্য উপযুক্ত: এই ব্যায়াম করার জন্য আপনাকে একেবারে পারদর্শী হতে হবে না। বিগিনার থেকে অ্যাডভান্স লেভেল পর্যন্ত সবাই এটি করতে পারে।
১৩. বহনযোগ্য: স্কিপিং রোপ সহজেই হাতের ব্যাগে রাখা যায়, তাই আপনার ব্যায়ামের রুটিন কখনোই মিস হবে না।
স্কিপিং করার আগে যা মনে রাখবেন:
১. ভালো মানের একটি দড়ি কিনুন।
২. খালি পায়ে স্কিপিং করার পরামর্শ দেওয়া হলেও, শুরুতে স্পোর্টস শু পরা শ্রেয়, কারণ হঠাৎ করে খালি পায়ে করলে ব্যথা হতে পারে।
৩. প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের জন্য ভালো মানের স্পোর্টস ব্রা পরা উচিত।
৪. প্রথমে ধীরে ধীরে স্কিপিং শুরু করুন এবং আস্তে আস্তে গতি বাড়ান।
৫. সমান জায়গায় স্কিপিং করুন। কাঠের মেঝে হলে ভালো হয়।
৬. এটি একটি হাই ইনটেনসিটি ব্যায়াম, তাই ওয়ার্ম আপ খুব জরুরি। প্রথমে ৫ মিনিট অবশ্যই ওয়ার্মআপ করবেন।
৭. শুরুতে ১৫ মিনিট স্কিপিং করুন, প্রতি ১০-১৫ সেকেন্ড পর বিরতি নিন।
স্কিপিং কত প্রকারের হয়:
১. ডাবল জাম্প: সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কিপিং স্টাইল, যা গতি বাড়াতে ও বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে।
২. ক্রস জাম্প: এটি একটি ইনটেনসিভ স্কিপিং স্টাইল, তবে মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া প্রয়োজন।
৩. এক পায়ে লাফানো: এটি অ্যাডভান্স স্কিপিং, তাই ডাবল জাম্প বা ক্রস জাম্পে অভ্যস্ত হওয়ার পরই এটি করা উচিত। এতে বেশি ভারসাম্যের প্রয়োজন হয়।
স্কিপিং কি জরায়ুর ক্ষতি করে?
অনেকের মনেই এই ভুল ধারণা রয়েছে যে স্কিপিং বা দড়ি লাফের ব্যায়াম মেয়েদের করা উচিত নয়, কারণ এতে জরায়ু নিচের দিকে নেমে যেতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, জরায়ু তখনই নিচে নামতে পারে যখন জরায়ুকে দেহের ভেতরে ধরে রাখা লিগামেন্টগুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং জরায়ুকে তার স্থানে ধরে রাখতে পারে না। সাধারণত এই লিগামেন্টগুলো দুর্বল হওয়ার কারণগুলো হলো:
১. নরমাল প্রেগন্যান্সি বা নরমাল ডেলিভারির সময় জরায়ুর আশেপাশের লিগামেন্টে ড্যামেজ হলে।
২. স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণ শক্তি।
৩. বছরের পর বছর খুব ভারী জিনিস তোলা বা মাসলের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে।
৪. ইসট্রোজেন হরমোনের অভাব হলে।
অনেকে মনে করতে পারেন, দড়ি লাফের কারণে ‘হেভি মাসল ড্যামেজ’ হয়। কিন্তু আমেরিকান কাউন্সিল অফ এক্সারসাইজের মতে, দড়িলাফ দেহে হালকা জগিং-এর চেয়ে বেশি প্রেসার ফেলে না। এমনকি ফিট নারীরা গর্ভাবস্থায়ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম হিসেবে দড়িলাফ দিতে পারেন। স্বাভাবিক অবস্থায় এক্ষেত্রে ঝুঁকির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ এবং ডাক্তারদের মতে, দড়িলাফ নিজে থেকে নারী-পুরুষ কারো দেহের কোনো ক্ষতি করে না। জরায়ুর ক্ষতির ক্ষেত্রে ডাক্তাররা দড়িলাফের চেয়ে সাধারণ কাজকর্ম, যেমন ভারী জিনিসপত্র তোলা, নামানো, খুব দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ওঠার মতো বিষয়ে বেশি সতর্ক থাকতে বলেন।
সুতরাং, নির্দ্বিধায় আপনার ফিটনেস রুটিনে দড়ি লাফানো যোগ করুন এবং সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপন করুন!