ঘরে ধূপকাঠি জ্বালান? সাবধান! সিগারেটের থেকেও ভয়ঙ্কর এটি, বিস্তারিত জানতে পড়ুন

সুন্দর সুগন্ধের জন্য আমরা অনেকেই বাড়িতে ধূপকাঠি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সুগন্ধের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে ভয়ঙ্কর বিষ! হ্যাঁ, এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন সাউথ চায়না ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (এসসিইউটি)-র বিজ্ঞানীরা।

ধূপকাঠি নিয়ে একটি বিস্তারিত গবেষণা চালিয়েছে এসসিইউটি। সেই গবেষণার ভিত্তিতে তারা দাবি করেছেন, ধূপকাঠির ধোঁয়া এমনকি সিগারেট খাওয়ার থেকেও অনেক বেশি ক্ষতিকর!

কলকাতার এক প্রখ্যাত ফুসফুস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তিনি জানান, এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চলছে এবং সেই গবেষণায় ধূপকাঠির ধোঁয়ার এই ক্ষতিকর দিকটি উঠে এসেছে। ক্রমাগত ধূপকাঠির ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করতে থাকলে ফুসফুস ও শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ধূপকাঠির মন মাতানো সুগন্ধে ঘর ভরে ওঠে, আমরাও বেছে বেছে সুগন্ধি ধূপকাঠি কিনে এনে ঘরে জ্বালাই। কিন্তু এই ধূপকাঠিই যে আমাদের শরীরের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে, তা হয়তো অনেকেরই অজানা।

২০১৫ সালে এসসিইউটি-র সেই গবেষণা আরও ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরেছে। গবেষণাটি বলছে, শুধু ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রেই নয়, যারা ধূমপান করেন না তাদের জন্যও ধূপকাঠির ধোঁয়া চরম ক্ষতিকর।

এসসিইউটি-র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যখন ধূপকাঠি জ্বালানো হয়, তখন তার থেকে নির্গত ধোঁয়ায় অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দূষণ কণা থাকে। এই কণাগুলো সহজেই বাতাসের সঙ্গে মিশে যায় এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ধূপকাঠির ধোঁয়ায় তিন ধরনের বিষাক্ত উপাদান বিদ্যমান – মিউটাজেনিক, জিনোটক্সিক এবং সাইটোটক্সিক। এই উপাদানগুলোর কারণে শরীরে ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়।

মিউটাজেনিক: এই বিষ ডিএনএ-র কোষের চরিত্র পরিবর্তন করে দেয়।
জিনোটক্সিক: এটি জিনের চরিত্রকে এমনভাবে বদলে দেয় যা ক্যানসার ডেকে আনতে পারে।
সাইটোটক্সিক: এটি এতটাই ক্ষতিকর যে শরীরের কোষগুলোকে মেরে ফেলতে পারে।
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা রিপোর্টেও একই ধরনের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে যদি ধূপকাঠির ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

ধূপকাঠির ধোঁয়ায় যে দূষণ কণিকা থাকে, তার মধ্যে ৬৪ রকমের যৌগিক পদার্থ শনাক্ত করা গেছে। ধোঁয়ার মাধ্যমে এই পদার্থগুলো শরীরে প্রবেশ করলে অনেক সময় শ্বাসকষ্টের মতো মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

সমীক্ষা আরও বলছে, শুধু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণিকাই নয়, ধূপকাঠিতে যে সুগন্ধী ব্যবহার করা হয়, তাও স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকারক।

এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যে ঘরে ঠিকঠাক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা (ভেন্টিলেশন) আছে, শুধুমাত্র সেই ঘরেই ধূপ জ্বালানো উচিত। বদ্ধ ঘরে ধূপ জ্বালালে তার ধোঁয়া থেকে উৎপন্ন কার্বন মনো-অক্সাইড সরাসরি শরীরে প্রবেশ করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।

অতএব, সুন্দর গন্ধের লোভে আর ঝুঁকি নেবেন না। ধূপকাঠি ব্যবহারের আগে এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন হন এবং নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy