কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তপাত? অর্শ হতে পারে! কীভাবে মোকাবিলা করবেন দেখুন

দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন? মলদ্বারে অস্বস্তি বা ফোলা ভাব অনুভব করছেন? মলত্যাগের সময় নিয়মিত রক্তপাত হচ্ছে? এই উপসর্গগুলি অর্শের ইঙ্গিত হতে পারে। বহু মানুষ অজান্তেই এই রোগটিকে পুষে রাখেন, ফলে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রাথমিক চিকিৎসাতেও যদি এই সমস্যা না কমে, তবে ঝুঁকি না নিয়ে সার্জারি করানোই বুদ্ধিমানের কাজ। মলদ্বারের অ্যানাল ক্যানেলের ভিতরে অথবা বাইরে অর্শ হতে পারে, যার ফলে মলদ্বার থেকে টাটকা রক্ত বের হয় এবং সাধারণত রক্তপাতের সময় ব্যথা থাকে না।

অর্শ কখন হয়?

বিভিন্ন কারণে অর্শ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

কোষ্ঠকাঠিন্য
দীর্ঘ সময় মল চেপে রাখার অভ্যাস
কম জল পান করা
সবুজ শাকসবজি কম খাওয়া
রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
ফাস্ট ফুডে আসক্তি
ফাইবারযুক্ত খাবার না খাওয়া
ক্রনিক ডায়রিয়া
অতিরিক্ত ওজন (ওবেসিটি)
গর্ভাবস্থা
পায়ুসঙ্গম
অর্শের উপসর্গ:

অর্শের কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে, যা দেখলে সতর্ক হওয়া উচিত:

মলত্যাগের সময় ব্যথাবিহীন রক্ত পড়া
প্রস্রাবের সঙ্গেও অল্প রক্ত পড়া
মলদ্বারে চুলকানি এবং অস্বস্তিবোধ, ব্যথা হওয়া
মলদ্বারের চারপাশ ফুলে ওঠা
মলদ্বারে শক্ত মাংসপিণ্ড (লাম্প) অনুভব করা
অর্শের প্রকারভেদ:

অর্শ মূলত তিন ধরনের হতে পারে:

ইন্টারনাল অর্শ: এটি সাধারণত রেকটামের ভিতরের দিকে হয় এবং বাইরে থেকে দেখা যায় না। মলত্যাগের সময় অস্বস্তি ও রক্তপাত এর প্রধান লক্ষণ।
এক্সটার্নাল অর্শ: এটি মলদ্বারের বাইরের চামড়ার নিচে হয় এবং বাইরে থেকে সহজেই বোঝা যায়। এক্ষেত্রে মলদ্বারে চুলকানি ও রক্তপাত হতে পারে।
থ্রম্বোসড অর্শ: এই অবস্থায় মলদ্বারের চারপাশে শক্ত মাংসপিণ্ড দেখা যায় এবং মলত্যাগের সময় জমাট রক্ত বের হতে পারে। এটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।
রোগ নির্ণয়:

অর্শ শনাক্ত করার জন্য চিকিৎসক নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করতে পারেন:

ডিজিটাল রেকটাল এক্সামিনেশন: চিকিৎসক গ্লাভস পরে পায়ুদ্বারে আঙুল প্রবেশ করিয়ে কোনো অস্বাভাবিক গ্রোথ আছে কিনা তা পরীক্ষা করেন।
কোলোনোস্কোপি: অর্শ নিশ্চিত করার জন্য এবং অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ জানার জন্য চিকিৎসক কোলোনোস্কোপি করার পরামর্শ দিতে পারেন।
চিকিৎসা ও অপারেশন:

অর্শের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক সাধারণত ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। তবে উন্নতি না হলে এবং অর্শ বাড়তে থাকলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল পদ্ধতি প্রচলিত আছে:

কেমিক্যাল কর্টারি বা থার্মো-কর্টারি: এই পদ্ধতিতে পাইলস অপসারণ করা হয় এবং এর জন্য রোগীকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না। কেবল আক্রান্ত স্থানটি অবশ করা হয়। রোগী সাধারণত অপারেশনের পরের দিনই বাড়ি ফিরতে পারেন।
Haemorrhoidectomy: এই পদ্ধতিতে রোগীকে জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়া করে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করা হয় এবং তারপর পায়ুদ্বার উন্মুক্ত করে পাইলসটি কেটে বাদ দেওয়া হয়। এই সার্জারির পর রোগ ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় ২০ শতাংশ থাকে।
Haemorrhoidal artery ligation: এটিও জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়ার মাধ্যমে করা হয়। এক্ষেত্রে হাইফ্রিকোয়েন্সি আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে পাইলসের রক্তনালীর রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে পাইলসটি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।
Stapling: এটি Haemorrhoidectomy-র বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে বৃহদান্ত্রের শেষ ভাগটি স্ট্যাপেল করা হয়, যা পাইলসের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। তবে এটি খুব কম ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।
কষ্ট কমাতে ঘরোয়া উপায়:

অর্শের কষ্ট কমাতে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে:

নিয়মিত উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, ফল, শাকসবজি ও দানা শস্য খাওয়া।
মলদ্বারের চারপাশে লাগানোর জন্য ট্রপিক্যাল ক্রিম ব্যবহার করা।
দিনে দুবার অন্তত ১০-১৫ মিনিট গরম জলের ভাপ নেওয়া।
নিয়মিত স্নান ও মলদ্বার পরিষ্কার রাখা।
ফোলা কমানোর জন্য আইস ব্যাগ ব্যবহার করা।
প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া।
সতর্কতা:

অর্শের ঝুঁকি কমাতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি:

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
মল চেপে না রাখা।
অতিরিক্ত তেল ও ঝালযুক্ত খাবার পরিহার করা।
নিয়মিত ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া।
মলত্যাগ করার পর টিস্যু ব্যবহার না করা।
নিয়মিত মলদ্বার পরিষ্কার রাখা।
মলের সঙ্গে সামান্য রক্ত দেখা দিলেও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
অর্শ অন্যান্য সাধারণ রোগের মতোই একটি অসুখ। তাই অযথা লজ্জা না পেয়ে সঠিক চিকিৎসা করানো উচিত। অভিজ্ঞ সার্জনের কাছে চিকিৎসা করালে এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy