আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কিডনি। কোনও কারণে কিডনি আক্রান্ত হলে বা কিডনিতে কোনও রকম সংক্রমণ হলে শরীরে একের পর এক নানা জটিল সমস্যা বাসা বাঁধতে শুরু করে। কিডনি শরীরের জলের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ছেঁকে ফেলে ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসাবে কাজ করে। তাই শরীরের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য আমাদের কিডনির যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কিডনি রোগ মানব শরীরের একটি নীরব ঘাতক। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে আমাদের কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলা উচিৎ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কিডনি সুস্থ রাখার কয়েকটি উপায়ঃ-
পর্যাপ্ত পরিমানে জল পানঃ- আমাদের শরীরের ৬৫%ই হচ্ছে জল। তাই শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমানে জল পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পরিমানে জল পান না করা কিডনির ক্ষতি হওয়ার সবচেয়ে বড় কারন। কিডনির প্রধান কাজ হল মূত্র তৈরী ও তার মাধ্যমে শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়া এবং শরীরের অতিরিক্ত জল ও মৌল বের করে দিয়ে লোহিত রক্তকণিকার ভারসাম্য রক্ষা করা। তাই আমাদেরকে প্রতিদিন ৩-৪ লিটার জল পান করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।
ঘুমের স্বল্পতাঃ- ঘুম হচ্ছে শরীরের সবচেয়ে কার্যকরী মেডিসিন। তাই দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিৎ। কম ঘুম কিডনি নষ্টের একটি কারন। ঘুমের সময়ই শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর টিস্যুর নবায়ন ঘটে। তাই রাত্রে ঘুমে বিঘ্ন ঘটতে থাকলে কিডনিসহ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে কিডনির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমে যায়।
লবনঃ- কিডনির স্বাস্থ্যের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত লবন খাওয়া থেকে বিরত থাকব। অতিরিক্ত লবন খাওয়া সোডিয়ামের বড় উৎস। সোডিয়ামের বেশির ভাগ টাই বর্জ্য হিসেবে শরীর থেকে বের করে দেয় পরিপাকের সময়। আমরা যখন বেশি বেশি লবণ খাই, তখন সোডিয়াম প্রক্রিয়াজাত করা নিয়ে কিডনি অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে।এতে কিডনির ওপর অনেখানি চাপ ফেলে দেয়। তাই আমরা কিডনিকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি লবন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
অপুষ্টিঃ- আমরা প্রত্যেকেই অপুষ্টির শিকার। আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার শরীর সুস্থ ও সাবলীল। আপনার ধারনা ভুল- আপনারা যারা মোটা তারা আরো বেশি অপুষ্টিতে ভুগছেন। বর্তমানে আমাদের খাবারে পুষ্টির পরিমান খুবই কমে গেছে। আজ থেকে ৪০০ বছর আগে একটা আপেলে যেই পুস্টি ছিল বর্তমানে সবচেয়ে ভালো ৪০টা আপেলেও সেই পরিমান পুষ্টি নেই। শাক সব্জিতেও পুষ্টির পরিমান আগের তুলনায় কম, তাই শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। এই অপুষ্টি থেকেই কিডনি রোগ হচ্ছে।
ধূমপানঃ- কিডনি নষ্টের এক অন্যতম কারন হল ধূমপান। ধূমপান কিডনি সহ শরীরের সব অঙ্গের জন্যই ক্ষতিকর। ধূমপান করার কারনে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত সঞ্চালনের কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনি কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। ফলে ধূমপায়ী ব্যক্তি একপর্যায়ে গিয়ে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়।
অ্যালকোহলে আসক্তিঃ- অ্যালকোহলে যে বিষ থাকে তা শুধু লিভাররেরই ক্ষতি করে না এটা কিডনিরও ক্ষতি করে থাকে। এর ফলে কিডনি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। অ্যালকোহলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন থাকে, যা শরীর থেকে দূর করতে কিডনির ওপর চাপ প্রয়োগ করে। শরীর ভালো রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই কিডনির খেয়াল রাখতে হবে এবং তাঁর সাথে অ্যালকোহলে আসক্তি কমাতে হবে।
ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানঃ- কম বেশি প্রায় সব ঔষধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। আমরা অনেকেই বাতের ব্যাথা, মাথা ব্যাথা আরো নানাবিধ কারনে অ্যাসপিরিন,আইবুপ্রুফেন ইত্যাদি জাতীয় ঔষধ গ্রহন করি। যা অনেকদিন ধরে ব্যবহার করলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। তাই ব্যাথা নাশক ট্যাবলেট এর পরিবর্তে একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।