করলা, তেতো হলেও তার অশেষ পুষ্টিগুণ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। বাঙালির পাতে করলা ভাজা এক জনপ্রিয় পদ। কিন্তু এই সুস্বাদু সবজিটি খাওয়ার সময় আমরা কি ভুল করছি? কুচি করে কাটার সময় অসাবধানতাবশত অনেক সময় এর বীজও সবজির সঙ্গে রয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই বীজসহ করলা রান্না করে খেলে উপকারের বদলে গুরুতর ক্ষতির শিকার হতে পারেন আপনি। চলুন জেনে নেওয়া যাক, করলার বীজ পেটে গেলে কী কী বিপদ হতে পারে:
১. হজমের সমস্যা: করলার বীজে ‘লেকটিন’ নামক এক ধরনের প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিন অতিরিক্ত পরিমাণে পেটে গেলে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হজমে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, অথবা পেট ফাঁপার মতো অস্বস্তিকর উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা হজম ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই করলা রান্নার আগে অবশ্যই বীজগুলো আলাদা করে নিন।
২. অ্যালার্জির ঝুঁকি: সবার ক্ষেত্রে না হলেও, কিছু মানুষের করলা থেকে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের এই ধরনের সংবেদনশীলতা রয়েছে, তাদের জন্য করলার বীজ আরও বেশি বিপজ্জনক। বীজে থাকা ‘ভিসিন’ নামক উপাদান কিছু মানুষের মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি, এমনকি শ্বাসকষ্ট বা শরীরে ফোলাভাবের মতো গুরুতর সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৩. গর্ভবতীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর: গর্ভবতী নারীদের জন্য করলার বীজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গর্ভাবস্থায় করলা রান্নার সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনোভাবেই এর বীজ খাবারের সঙ্গে মিশে না যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করলার বীজ খেলে জরায়ুতে সংকোচন হতে পারে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায় এবং অন্যান্য গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। হবু মায়েদের এই বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
৪. ওষুধের কার্যকারিতায় প্রভাব: বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, বিশেষ করে যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তাদের জন্য করলার বীজ মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্রহণকারীরা যদি করলার বীজ খান, তাহলে তা ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে শরীরে সুগারের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে ‘হাইপোগ্লাইসেমিয়া’র মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে, যা জীবন বিপন্নকারীও হতে পারে।
অতএব, করলার তেতো স্বাদ যতই প্রিয় হোক না কেন, এর পুষ্টিগুণ পেতে হলে অবশ্যই বীজ ফেলে রান্না করুন। সামান্য অসতর্কতা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
