সমস্যাটা কী? দিন কতক ধরে কোনও সেলফিই আর পছন্দ হচ্ছে না? যা-ই তুলুন না কেন, চোয়ালের ভাঁজের নিচে এক পরত ফ্যাটের স্তর চোখে পড়ছে বারবার৷ সেটা দেখতে এতই বাজে লাগছে যে একের পর এক ছবি ডিলিট করে চলেছেন? হাই নেক জামাকাপড় পরছেন, তাল তাল চুইং গাম চিবোচ্ছেন, কোকো বাটার দিয়ে মুখ আর গলা মাসাজ করছেন প্রতি রাতে, কিন্তু কিছুতেই কিছু লাভ হচ্ছে না? নাকি মাথা ঠান্ডা করুন, ডবল চিন দূর করার কতগুলো সামাধান আছে৷
তার মধ্যে প্রথমটা খুব সহজ৷ ডবল চিন হওয়ার আগে থেকেই সতর্ক হোন৷ মনে রাখবেন, 30-এর কোঠায় পৌঁছে গেলেই কিন্তু শরীরে ফ্যাট জমার হার বাড়বে, সেই সঙ্গে ক্রমশ ঘাটতি পড়বে আপনার পেশির স্থিতিস্থাপকতায়, তা ঝুলে যাবে নিচের দিকে৷ তাই শরীরের অন্য কোথাও ফ্যাট না থাকলেও 40-এর দিকে এগোতে আরম্ভ করলেই ডবল চিনের সমস্যা আপনাকেও ভোগাতে পারে৷ তাই সময় থাকতেই রাশ টানুন খাওয়াদাওয়ায়, মুখের পেশি যাতে টানটান থাকে তেমন ব্যায়াম অভ্যেস করুন৷
যাঁদের ডবল চিন হয়ে গিয়েছে, তাঁরা কিন্তু রাতারাতি কোনও ফল পাবেন না, একটু ধৈর্য ধরে ব্যায়াম অভেস করে যেতে হবে৷ সেই সঙ্গে পুরো শরীরের ওজন কমানোর প্রতিও নজর দিন, সম্ভব হলে যোগাযোগ করুন একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে৷ তিনি বলে দেবেন ঠিক কোন ধরনের খাওয়াদাওয়া আপনাকে সুস্থ রাখবে৷ এই সব ক’টি বিষয় একসঙ্গে কাজ করতে আরম্ভ করলেই চোয়ালের নিচে আলগা হয়ে ঝুলে পড়া ত্বকে ফিরে আসবে টানটান ভাব৷ অনেকে ওজন কমানোর পরেও চিবুকের নিচের ত্বকের টানটান ভাবটা আর ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারেন না, ত্বক ঝুলেই থাকে৷ সেটাকেও ডবল চিন মনে হতে পারে৷ এটাও কিন্তু রাতারাতি স্বাভাবিক হবে না, অনেকটাই সময় লাগবে৷ ততদিন পর্যন্ত যেটা ট্রাই করে দেখতে পারেন সেটা হচ্ছে মেকআপ টেকনিক৷ হতাশ হবেন না, যতদিন না ফ্যাট পুরোপুরি কমছে, ততদিন বুদ্ধিমানের মতো প্রসাধন ব্যবহার করলে দিব্যি ঢেকে রাখা সম্ভব এই সমস্যা৷ তাই আর দেরি না করে এখনই উঠে-পড়ে লাগুন৷ জেনে নিন আপনি কী কী করতে পারেন৷
চিন আপ
বসে বা দাঁড়িয়ে করা যায় এই ব্যায়াম৷ মেরুদণ্ড সোজা রেখে দাঁড়ান/ বসুন৷ মাথা ক্রমশ পিছনের দিকে নিয়ে যান, চোখ থাকবে সিলিংয়ের দিকে৷ এবার ঠোঁট দুটোকে গোল করে সামনের দিকে যতটা পারেন ঠেলতে থাকুন৷ চোয়াল যেন পুরোপুরি স্ট্রেচ করে৷ পাঁচ গোনা পর্যন্ত ধরে রাখুন এই পজ়িশন, ক্রমশ সময়টা বাড়িয়ে 10 পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন৷ একসঙ্গে 10টি চিন আপ করলে একটি সেট পুরো হবে৷ তার পর আবার রিপিট করতে পারেন৷
নেক রোল
যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁরা নেক রোলের সঙ্গে পরিচিত৷ একইসঙ্গে চোয়াল, গলা, ঘাড়ের পেশিকে টোন আপ করতে সাহায্য করে এই বিশেষ ব্যায়াম৷ রিল্যাক্স হয় আপনার কাঁধের পেশিগুলিও৷ মেরুদণ্ড সোজা রেখে মাথা ঘোরাতে থাকুন, এক পাশের কাঁধের দিক থেকে তা যেন অন্য পাশের কাঁধের দিকে আসে৷ প্রথমে ঘড়ির কাঁটার দিকে রোল করবেন, তার পর ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে একইভাবে মাথা ঘোরাতে হবে৷ 10টি একসঙ্গে করলে একটি সেট পুরো হবে৷ সুবিধের ব্যাপারটা হচ্ছে যে আপনি অফিসের ডেস্কে বসে কাজের ফাঁকে ছোট্ট বিরতি নিয়েও এই ব্যায়ামগুলি অভ্যেস করতে পারেন৷
টাং প্রেস
মেরুদণ্ড সোজা রেখে দাঁড়ান/ বসুন৷ মাথা ক্রমশ পিছনের দিকে নিয়ে যান৷ সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আপনার জিভটা টান করে ঠেকিয়ে রাখুন মূর্ধা বা মুখগহ্বরের তালুতে৷ এইভাবে চিবুকটা নামিয়ে আনুন বুকের কাছে, যেন তা এসে আপনার গলার কাছটা স্পর্শ করে৷ কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন, তার পর জিভটা রিল্যাক্স করে ঘাড় সোজা করে সামনে তাকান৷ 20টি রিপিটেশন করলে তবে একটি সেট পুরো হবে, অন্ততপক্ষে দুটো সেট করুন৷
সিংহাসন
এই যোগমুদ্রাটি মুখের মাসল টানটান করতে খুব কাজে দেয়৷ শুধু যে মুখের মাসল টোনড হয়, তা নয়, এই আসনের নিয়মিত অভ্যেসের ফলে চিবুক ও চোয়ালের আশপাশের মাসল শক্তিশালীও হয়ে ওঠে৷ যাঁরা সিংহাসন নিয়ম করে সিংহাসন অভ্যেস করেন, তাঁদের ডাবল চিনের সমস্যা সার্জারি ছাড়াই উধাও হয়ে যায়৷ এবার প্রশ্ন, কীভাবে অভ্যেস করবেন এই আসনটি? দু’ভাবে করা যায়, শুয়ে ও বসে৷ খুব রিল্যাক্সড ভঙ্গিমায় বসুন৷ জিভটা যতটা সম্ভব বের করে নিন বাইরে, ক্রমশ আপনার গলা আর চোয়ালের কাছে টানটান ভাবটা অনুভব করতে পারবেন৷ এইভাবে 10 পর্যন্ত গুনুন, তিন থেকে পাঁচটা রিপিটেশন করতে পারেন৷ দিনে অন্তত দুটো সেট এইভাবে অভ্যেস করতে হবে৷
টিল্ট হেড
সোজা হয়ে দাঁড়ান৷ মাথাটা ক্রমশ পিছনের দিকে নিয়ে যান, গলা আর চিবুকের কাছটায় টানটান ভাব অনুভব করতে পারবেন৷ আবার ফিরিয়ে আনুন আগের পজ়িশনে৷ এইভাবে অন্তত 10 সেকেন্ড ধরে রাখুন, একসঙ্গে অন্তত পাঁচটি রিপিটেশন করলে একটি সেট পূর্ণ হবে৷ এই ব্যায়ামটি শনতে যতটা সহজ, করতেও ঠিক ততটাই৷ অফিসে কাজের ফাঁকে দিব্যি অভ্যেস করতে পারবেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই ফারাকটা পরিষ্কার বুঝতে পারবেন৷
ব্লো এয়ার
মেরুদণ্ড সিধে রেখে সোজা হয়ে বসুন৷ মাথাটা পিছনের দিকে নিয়ে গিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকান৷ ঠোঁট দুটো সরু করে গাল ফুলিয়ে মুখের ভিতর থেকে বাতাস ছাড়ুন 10 সেকেন্ডের জন্য৷ 10টি রিপিটেশন করলে একটি সেট পুরো হবে৷ অন্তত পাঁচটি রিপিটেশন অভ্যেস করুন৷
ব্যায়াম করে ডবল চিন কমানোর উপায় তো জানলেন। আগেই বলা হয়েছে, এই পথ অনুসরণ করলে ফল পাওয়ার ব্যাপারটাও একটু দীর্ঘমেয়াদি হয়ে পড়ে। তাই কিছু শর্টকাটের কথাও জেনে রাখা ভালো। জেনে নিন মেকআপের কিছু বিশেষ কৌশল। ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারলে কারও নজরেই পড়বে না আপনার ডবল চিন!
কৌশল 1
প্রথমেই সারা মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে বেস তৈরি করে নিন। বেস ঠিকঠাক হলে মেকআপও নিখুঁত হবে।
এবার আপনার ত্বকের স্বাভাবিক রঙের চেয়ে দু’ শেড গাঢ় ফাউন্ডেশন আর ব্রোঞ্জার নিন। যাঁদের গায়ের রং ফর্সা, তাঁরা গোলাপি ঘেঁষা ব্রোঞ্জার বাছবেন। মাঝারি বা চাপা গায়ের রং যাঁদের, তাঁরা একটু সোনালির দিকের শেড বাছুন।
চিবুকে ফাউন্ডেশন লাগানোর পর অল্প একটু ব্রোঞ্জার নিয়ে চোয়ালের হাড় বরাবর লাগান। ছোট ছোট স্ট্রোকে মিশিয়ে দিন। এভাবে পুরো চোয়ালের হাড়ে ব্রোঞ্জার লাগান।
মেকআপ স্পঞ্জ দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। চোয়ালের হাড়ের নিচে চিবুকের নরম অংশেও ব্রোঞ্জারের ছোঁয়া রাখুন, যাতে গলা আর চিবুকের রঙে ফারাক না থাকে।
কৌশল 2
ঠোঁটের মেকআপের উপর জোর দিন। সত্যি বলতে, গাঢ় রঙের লিপস্টিকও আপনার চেহারা একদম পালটে দিতে পারে। ডবল চিন থেকে লোকের নজর ঘোরাতে গাঢ় লাল, গাঢ় খয়েরি শেডের লিপস্টিক পরুন। চকচকে লিপ গ্লসও লাগিয়ে নিতে পারেন। ঠোঁটে নাটকীয়তা এলে চিবুকের দিকে আর নজর যাবেই না।
কৌশল 3
ঠোঁটের মতোই গাল আর চোখের মেকআপও সমান জরুরি। চোখের জন্য কোনও নরম রঙের আইশ্যাডো আর লাইনার বাছুন। উপরের দিকে ছোট ছোট টানে ব্লাশার লাগান গালে। চিবুকের খুঁত অনেকটাই ঢাকা পড়ে যাবে।
কৌশল 4
হেয়ারস্টাইলের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। চিবুকের ঠিক নিচে বা ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলের কোনও স্টাইল করবেন না। চিবুকের নিচ পর্যন্ত লম্বা চুলে কার্ল চলবে না একেবারেই। বরং এমন কোনও স্টাইল করুন যাতে চিবুকের দিকটা বেশি নজরে না আসে। সমস্ত চুল একদিকে নিয়ে গিয়ে পনিটেল বাঁধতে পারেন।