গরমে সুস্থ থাকতে দই কতটা পরিমাণে খাবেন? একবার পড়ুন

গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে শরীর যখন ক্লান্ত, তখন এক বাটি ঠান্ডা দই এনে দিতে পারে অনাবিল শান্তি। শুধু স্বাদেই নয়, গরমে শরীরকে সুস্থ রাখতেও দইয়ের জুড়ি মেলা ভার। তীব্র সূর্যের আলো এবং উচ্চ তাপমাত্রার কারণে শরীরে যে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তা রুখতে খাদ্যতালিকায় দইয়ের মতো উপকারী খাবার যোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

দই একটি দুগ্ধজাত পণ্য, যা ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগারিকাস এবং স্ট্রেপ্টোকক্কাস থার্মোফিলাসের মতো উপকারী ব্যাকটেরিয়া দিয়ে তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়া দুধকে প্রোবায়োটিক, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ একটি ক্রিমি ও টক স্বাদের খাবারে রূপান্তরিত করে, যা শরীরের জন্য বহুবিধ উপকার বয়ে আনে। গ্রীষ্মের দিনে দই খাওয়া তাই আমাদের শরীরের জন্য বিশেষভাবে জরুরি। আসুন, জেনে নেওয়া যাক গরমে দই খেলে আমরা কী কী উপকার পেতে পারি:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই উপকারী ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবডির উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে এবং ইমিউন কোষকে সক্রিয় করে। যা শরীরের সংক্রমণ এবং রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ায়। তাই বিশেষজ্ঞরা গরমের দিনে নিয়মিত দই খাওয়ার পরামর্শ দেন।

ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উৎস:

দই ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন বি ১২-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর। গরমে শরীরকে সুস্থ রাখতে এই উপাদানগুলির যথেষ্ট প্রয়োজন। এক কাপ দইয়ে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:

দই খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এর প্রোটিন এবং চর্বি উপাদান কার্বোহাইড্রেটের হজম প্রক্রিয়াকে ধীরে করে দেয়। ফলে রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি রোধ হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দই বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এটি স্থিতিশীল গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী:

দইয়ে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত দই খেলে চুল প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় এবং চুল পড়া ও শুষ্কতার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও, এটি ত্বককে শুষ্ক হতে বাধা দেয় এবং মসৃণ রাখে।

তাপপ্রবাহ ও জলশূন্যতা থেকে রক্ষা করে:

গ্রীষ্মকালে হিট স্ট্রোক এবং তাপের কারণে শরীরে জলশূন্যতা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। দই এই সমস্যা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:

দই খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে, ফলে বারবার খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এড়ানো যায়।

সবমিলিয়ে, গ্রীষ্মের দিনে দই একটি অসাধারণ খাবার যা কেবল শরীরকে ঠান্ডা রাখে না, বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের যোগান এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। তাই এবারের গরমে আপনার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই দই অন্তর্ভুক্ত করুন এবং সুস্থ থাকুন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy