পশ্চিমবঙ্গের সাঁতার সংস্থা বর্তমানে চরম বিতর্ক ও অচলাবস্থার মুখে। দীর্ঘ আট মাস ধরে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি রাজ্য সাঁতার সংস্থার কাজ চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৯ অক্টোবর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে বহু প্রতীক্ষিত বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বলে শোনা গেলেও, বিদায়ী কমিটি এখনও পর্যন্ত এই মর্মে কোনো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।
সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণ সভা আহ্বানের কমপক্ষে পনেরো দিন আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করা বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে ৪ অক্টোবরের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। নথিভুক্ত সংস্থাগুলো তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।
বিদায়ী কমিটির বিরুদ্ধে ‘অপেক্ষার নীতি’র অভিযোগ
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজ্য সাঁতার সংস্থার বিদায়ী কার্যকরী কমিটির বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রামানুজ মুখোপাধ্যায় ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসেই এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও, তারা এখনও পদ আঁকড়ে থাকায় বিতর্ক চরমে।
বিরোধী শিবির, বিশেষ করে প্রাক্তন সচিব স্বপন আদক, বিদায়ী কমিটির এই ‘অপেক্ষার নীতি’কে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, “সভাপতি রামানুজ মুখোপাধ্যায় সংস্থার সংবিধান না-মেনে সবকিছু নিজের মতো করে চালাতে চাইছেন। পদ আঁকড়ে থাকার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেন এই ভদ্রলোক।” স্বপন আদকের অভিযোগ, সভাপতি নিজের সুবিধা মতো সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।
গোপন বৈঠক ও সদস্যপদ বাতিলের বিতর্ক
২৫ সেপ্টেম্বরের কার্যকরী কমিটির বৈঠক নিয়েও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য কার্যকরী কমিটির সদস্যদের যতটা সম্ভব দেরিতে জানানো হয়েছিল। এমনকি কোচবিহারের প্রতিনিধি রমেন বিশ্বাকে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে এবং সংস্থার সচিব কঙ্কণ পানিগ্রাহীকেও একই সময়ে বৈঠকের কথা জানানো হয়।
এরপরই শুরু হয় সদস্যপদ বাতিল করার বিতর্ক। বিদায়ী কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে পূর্ব মেদিনীপুর এবং কোচবিহারের প্রতিনিধিরা ৩১ মার্চের মধ্যে নাম নথিভুক্ত না-করানোয় তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বিরোধীদের দাবি, অতীতে কলকাতা জেলা সাঁতার সংস্থা পরপর দু’বছর নাম নথিভুক্ত না-করানো সত্ত্বেও সদস্যপদ হারায়নি। তাহলে এই দুই জেলার ক্ষেত্রে উল্টো নিয়ম কেন হবে? বিরোধীদের যুক্তি, পূর্ব মেদিনীপুর এবং কোচবিহার নির্ধারিত দিনের মধ্যে টাকা জমা দিতে চাইলেও ৩১ মার্চ অফিস বন্ধ থাকায় তা নেওয়া হয়নি। সবমিলিয়ে, ২৫ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে ১৯ অক্টোবর সাধারণ সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হলেও, কেন বিজ্ঞপ্তি জারি হলো না, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে।
রাজ্য সাঁতার সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভা এবং নির্বাচন ঘিরে শাসক ও বিরোধীদের এই দড়ি টানাটানি বাংলার সাঁতারের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
রাজ্য সাঁতার সংস্থার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া সংগঠনের নির্বাচন নিয়ে এই অচলাবস্থা কি রাজ্যের ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর নয়?