টানা ব্যর্থতা এবং ঐতিহাসিক লজ্জার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড (CWI) উইন্ডিজ ক্রিকেটকে শক্তিশালী করার জন্য তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের ঘোষণা করেছে। গত জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জ্যামাইকার সাবিনা পার্কে সিরিজের শেষ টেস্টে মাত্র ২৭ রানে অলআউট হওয়ার (টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর) লজ্জাজনক হারের পরই আগস্টে ক্রিকেট স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অফিশিয়েটিং কমিটি-র একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। এই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে ক্লিন সুইপ হয়েছিল।
CWI-এর প্রেস রিলিজ অনুসারে, সেই বৈঠকে কিংবদন্তি ক্রিকেটার ব্রায়ান লারা এবং স্যার ক্লাইভ লয়েড ছাড়াও বর্তমান ক্যাপ্টেন শেই হোপ ও রস্টন চেজ, হেড কোচ এবং সাবেক খেলোয়াড়রা উপস্থিত ছিলেন।
কমিটি উইন্ডিজ ক্রিকেটের অবস্থা নিয়ে ১০টি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে: আঞ্চলিক টুর্নামেন্টের মানের পতন, খেলোয়াড়দের টেকনিক্যাল, ট্যাকটিক্যাল ও মানসিক দক্ষতার অভাব, ফ্র্যাঞ্চাইজি সিস্টেমের দুর্বলতা, অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো, বিশেষজ্ঞ কোচের অভাব, ICC থেকে কম রাজস্ব এবং খেলোয়াড়দের উন্নয়নের দুর্বল পথরেখা। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে নেপালের মতো সহযোগী দেশের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারের ঘটনাও এই উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
অগাস্টের আলোচনার ভিত্তিতে, কমিটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার একটি তালিকা তৈরি করে, যা গত ২৫ সেপ্টেম্বর CWI-এর বোর্ড অফ ডিরেক্টরস দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে:
তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ (০-৬ মাস):
বিশেষজ্ঞ কোচ নিয়োগ: আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত একজন ব্যাটিং কোচ নিয়োগ করা হবে। সিনিয়র পুরুষ দলের জন্য একজন পূর্ণ সময়ের স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট/পারফরম্যান্স কোচ এবং মহিলা দলের জন্যও এই পদটিকে পূর্ণ-কালীন করা হবে।
হাই-পারফরম্যান্স সেন্টার: কুলিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অত্যাধুনিক নেট, জিম এবং পুনর্বাসন সুবিধাসহ একটি হাই-পারফরম্যান্স সেন্টার তৈরির প্রস্তাব পেশ করা হবে।
জবাবদিহিতা ও মান: ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলিকে এবার থেকে ব্যক্তিগত উন্নয়ন পরিকল্পনা (IDP) জমা দিতে হবে এবং নতুন ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। খেলোয়াড়দের ফিটনেস ট্র্যাক করার জন্য একটি নতুন আঞ্চলিক ফিটনেস লিডারবোর্ড চালু হবে।
দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য:
জাতীয় উন্নয়ন কাঠামো: গ্রাসরুট, স্কুল, অ্যাকাডেমি এবং হাই-পারফরম্যান্স পর্যায়কে একত্রিত করে একটি জাতীয় ক্রিকেট উন্নয়ন কাঠামো তৈরি করা।
ফ্র্যাঞ্চাইজি সংস্কার: খেলোয়াড় উন্নয়নে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং বিকল্প পেশাদার মডেল নিয়ে বিবেচনা করা।
মানসম্পন্ন অ্যাকাডেমি: ১১-১৮ বছর বয়সীদের জন্য হাই-পারফরম্যান্স প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত মানসম্মত অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করা।
আর্থিক স্থিতিশীলতা: ICC-এর রাজস্ব বণ্টনে ন্যায্যতার জন্য লবিং করা এবং সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেওয়া।
CWI-এর ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট, মাইলস বাসকম্বে, এই পদক্ষেপকে “নির্ণায়ক পদক্ষেপ” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এর মাধ্যমে সিস্টেমকে শক্তিশালী করা এবং ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, সুবিধা ও পরামর্শ প্রদান করা হবে।