ভারত বনাম থাইল্যান্ড, ফুটবলের পুরনো দ্বৈরথ, নতুন ইতিহাস তৈরির হাতছানি

এশিয়ার ফুটবল মানচিত্রে ভারত ও থাইল্যান্ডের দ্বৈরথ বহু পুরনো। এশিয়ান গেমস থেকে শুরু করে এশিয়ান কাপ, কিংস কাপ থেকে নেহরু কাপ – এই দুই দলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ফুটবলপ্রেমীদের বহুবার উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ উপহার দিয়েছে। আজ, ৪ জুন, ২০২৫, থাইল্যান্ডের থাম্মাসাত স্টেডিয়ামে আয়োজিত হতে চলা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে আবারও মুখোমুখি হচ্ছে এই দুই ঐতিহ্যবাহী দল। এটি ভারতের আসন্ন এশিয়ান কাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

১৯৬২ সালে জাকার্তায় প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল, যেখানে ভারত ৪-১ ব্যবধানে থাইল্যান্ডকে হারিয়েছিল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মোট ২৬ বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও থাইল্যান্ড। এর মধ্যে ভারত জিতেছে ৭ বার, থাইল্যান্ড ১২ বার এবং ৭টি ম্যাচ ড্র হয়েছে।

যদিও সাম্প্রতিক ইতিহাস ভারতের পক্ষেই কথা বলছে। ২০১৯ সালে দুইবার দেখা হয়েছিল দু’দলের, এবং উভয় ম্যাচেই জয় পেয়েছে ‘ব্লু টাইগার্স’রা। প্রথমবার, এএফসি এশিয়ান কাপে আবুধাবিতে ৪-১ গোলের দুর্দান্ত জয়, এবং এরপর থাইল্যান্ডের মাটিতে কিংস কাপে ১-০ ব্যবধানে ব্রোঞ্জ পদক জয়।

ছেত্রীর স্মৃতিচারণ ও অনুপ্রেরণা
সেই ২০১৯ সালের এশিয়ান কাপের ম্যাচে জোড়া গোল করে ভারতের জয় নিশ্চিত করেছিলেন কিংবদন্তি স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রী। স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, “ওটা অনেক আগে ছিল, কিন্তু আজও মনে পড়ে দলের অসাধারণ পারফরম্যান্স। থাপা দুর্দান্ত খেলেছিল, উদান্তা খুব ভালো ছিল। ডিফেন্স দুর্ভেদ্য ছিল। আশিক আমার সঙ্গে শুরু করেছিল, সেও ভালো খেলেছিল। পুরো দলটাই অসাধারণ পারফর্ম করেছিল।”

ছেত্রী আরও বলেন, “ওই সময় থাইল্যান্ড কাগজে-কলমে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু মাঠে আমরা সেই দিন প্রমাণ করি, পরিশ্রম করলে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেললে, যে কাউকে হারানো সম্ভব। শুধু ৪টা গোল নয়, পুরো ম্যাচে আমাদের আধিপত্য ছিল। এটা দলের তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য বড় অনুপ্রেরণা ছিল।”

চল্লিশ বছর বয়সেও ছেত্রীর মধ্যে সেই একই উদ্দীপনা বর্তমান। তিনি বলেন, “ওই ম্যাচটা আমাদের জন্য একটা মানদণ্ড, কীভাবে একটা দল একজোট হয়ে দুর্দান্ত কিছু করে ফেলতে পারে। আমরা সেখান থেকে আজও অনুপ্রেরণা নিই।”

থাইল্যান্ডের বর্তমান অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ
বর্তমানে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত ১২৭ নম্বরে এবং থাইল্যান্ড ৯৯ নম্বরে রয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জাপানি কোচ মাসাতাদা ইশি দায়িত্ব নেওয়ার পর থাইল্যান্ডের পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। তারা এশিয়ান কাপে শেষ ষোলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল। যদিও বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে কোরিয়া ও চীনের কাছে পিছিয়ে পড়েছে, তবুও ২০২৪ সালটা তাদের জন্য মোটের ওপর সফল।

থাইল্যান্ড কিংস কাপ জিতেছে ফিলিপিন্স ও সিরিয়াকে হারিয়ে, এবং এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালেও উঠেছিল, যেখানে ভিয়েতনামের কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়। তাদের দলের মূল খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন অধিনায়ক চানাথিপ সঙক্রাসিন, ফরোয়ার্ড সূপচাই ছাইদেদ, ইতালিতে জন্ম নেওয়া ডিফেন্ডার মার্কো বাল্লিনি এবং তিন গোল করা মিডফিল্ডার বেন ডেভিস। বিদেশে খেলা তারকারাও রয়েছেন – যেমন জারোয়েনসাক ওংগর্ন (সেরেজো ওসাকা), একানিত পানিয়া (এহিমে এফসি), এলিয়াস দোলাহ (বালি ইউনাইটেড)।

ভারতের প্রস্তুতি ও কৌশল
ভারতের দলে এখন তরুণ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সুন্দর মিশেল দেখা যাচ্ছে। উইঙ্গার লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে থাইল্যান্ডকে ‘ক্ষুধার্ত’ দল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “ওরা দৌড়ঝাঁপ পছন্দ করে, বল নিয়েও খেলতে চায়। তবে আমরা নিজের দিকেই মনোযোগ দিচ্ছি। অনুশীলনে যা করেছি, সেটা ম্যাচে কার্যকর করতে পারলেই সাফল্য আসবে।”

থাইল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচ ভারতের জন্য শুধু পুরনো রোমাঞ্চ নয়, ভবিষ্যতের প্রস্তুতিও। হংকংয়ের বিপক্ষে আসন্ন এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের আগে এই ম্যাচ থেকে দল নিজের ঘাটতি ও শক্তির দিকগুলো ভালোভাবে বুঝে নিতে পারবে। ভারত যদি ছেত্রীর কথামতো মাঠে সেই ২০১৯ সালের আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামে, তবে আবারও ফুটবলপ্রেমীরা এক নতুন ইতিহাস দেখার সুযোগ পাবেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy