পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫৪ আলোকবর্ষ দূরে ‘টিওআই ১৮৪৬ বি’ (TOI 1846 b) নামে একটি ‘সুপার আর্থ’ (আকারে পৃথিবীর চেয়ে বড় গ্রহ) আবিষ্কার করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। এই বিশাল পাথুরে গ্রহটি থেকে রহস্যময় আলোর সংকেতও শনাক্ত করা হয়েছে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। গ্রহটি একটি ছোট ও শীতল লাল বামন নক্ষত্রকে প্রতি চার দিনে একবার প্রদক্ষিণ করছে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, নাসার টেস স্পেস টেলিস্কোপ (TESS Space Telescope) ব্যবহার করে এই নতুন গ্রহটি শনাক্ত করা হয়েছে। ‘টিওআই ১৮৪৬ বি’ এর আকার ও বৈশিষ্ট্যের কারণে এটিকে পৃথিবী এবং নেপচুনের মতো বৃহত্তর গ্যাসসমৃদ্ধ গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে রাখা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, গ্রহটির তাপমাত্রা প্রায় ৬০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট, এবং এর একটি শক্ত পাথুরে কেন্দ্র থাকতে পারে। সেখানে ঘন বরফের স্তর, অগভীর সমুদ্র অথবা একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা।
রহস্যময় আলোর ঝলকানি ও সম্ভাব্য গ্রহ সিস্টেম:
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘টিওআই ১৮৪৬ বি’ গ্রহের হোস্ট নক্ষত্রটি একটি লাল বামন, যার আকার ও ভর আমাদের সূর্যের প্রায় ৪০ শতাংশ। টেস টেলিস্কোপের চারটি উচ্চ-সংবেদনশীল ক্যামেরা প্রতি ৩০ মিনিটে আকাশ স্ক্যান করে। এই স্ক্যানিংয়ের সময় গ্রহটি থেকে নিয়মিত বিরতিতে আলোর ঝলকানি দেখা গেছে। কেন এই সংকেত তৈরি হচ্ছে, তা এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো, গ্রহটি সম্ভবত একা নয়। এর কক্ষপথের সূক্ষ্ম পরিবর্তন থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, সেখানে একটি গ্রহ সিস্টেম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে আরও অন্যান্য গ্রহও থাকতে পারে।
ভবিষ্যৎ অনুসন্ধান ও ওয়েব টেলিস্কোপের ভূমিকা:
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (James Webb Space Telescope) ব্যবহার করে ইনফ্রারেড আলোর সাহায্যে গ্রহটির বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। এর ফলে গ্রহটিতে জলীয় বাষ্প, মিথেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড বা অন্যান্য গ্যাসের উপস্থিতি বা পরিমাণ শনাক্ত করা সম্ভব হবে। হাওয়াইয়ের জেমিনি অবজারভেটরির (Gemini Observatory) মতো ভূপৃষ্ঠের টেলিস্কোপের মাধ্যমেও এই গ্রহটির ওপর নিবিড় নজর রাখা হচ্ছে। এই আবিষ্কার মহাবিশ্বে জীবনের অনুসন্ধান এবং গ্রহের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন তথ্য দিতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী।