গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতে এয়ার কন্ডিশনার (AC) এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। অনেকেই নতুন এসি কেনার পরিকল্পনা করছেন বা পুরনো এসি ব্যবহার করছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ খরচ এবং রক্ষণাবেক্ষণের বাইরেও এসির ব্যবহারে একটি মারাত্মক বিপদ লুকিয়ে আছে, যা সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন।
অনেক ব্যবহারকারী মনে করেন যে অল্প সময়ের জন্য ঘরের বাইরে গেলে এসি বন্ধ করার প্রয়োজন নেই, যাতে ফিরে এসে ঠান্ডা ঘর পাওয়া যায়। তবে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল এবং বিপজ্জনক। একটানা দীর্ঘক্ষণ এসি চললে মেশিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে, যা যন্ত্রাংশগুলোর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
কতক্ষণ এসি চালানো নিরাপদ?
এসি কতক্ষণ একটানা চালানো উচিত, তা নির্ভর করে ঘরের আকার এবং এসির টনেজের উপর। সাধারণত, ছোট ঘরের জন্য ১ টনের এসি ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা এবং বড় ঘরের জন্য ১.৫ বা ২ টনের এসি ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত একটানা চালানো যেতে পারে। এর বেশি সময় ধরে লাগাতার চালানোর পর এসিকে অন্তত কিছুক্ষণ বিশ্রাম দেওয়া জরুরি।
বিপদ কোথায়?
যদি এসি ক্রমাগত বিরতিহীনভাবে চলতে থাকে, তাহলে এর কম্প্রেসার অতিরিক্ত লোড হয়ে যায় এবং ভেতরের অন্যান্য যন্ত্রাংশগুলো প্রচণ্ড গরম হতে শুরু করে। এর ফলে বিদ্যুৎ খরচও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। যারা মনে করেন যে এসি একটি যন্ত্র মাত্র, তার আবার কিসের বিশ্রাম, তারা আসলে বড় ভুল করছেন। লাগাতার এসি চালালে কম্প্রেসারে হঠাৎ আগুন ধরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত তাপমাত্রায় এসির বাইরের প্লাস্টিকের বডিও গলে যেতে পারে।
একটানা দীর্ঘক্ষণ ও মাত্রাতিরিক্ত এসি চললে তা কেবল আগুন লাগার ঝুঁকিই তৈরি করে না, এর ভুল ব্যবহার গোটা বাড়ির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থারও মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে শর্ট সার্কিটের মতো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিজেদের এবং বাড়ির সুরক্ষার জন্য মাঝে মাঝে এসি বন্ধ করে মেশিনটিকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
করণীয় কী?
এই মারাত্মক বিপদগুলো এড়াতে কিছু সহজ বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন:
বন্ধ করুন এসি: যখনই ঘরের বাইরে বেরোবেন, তা অল্প সময়ের জন্যই হোক না কেন, অবশ্যই এসি বন্ধ করে দিন।
টাইমার ব্যবহার করুন: এসিতে টাইমার সেট করার সুবিধা থাকলে তা ব্যবহার করুন, যাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এসি নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়।
পর্দা ব্যবহার করুন: ঘরের ঠান্ডা বাতাস ধরে রাখার জন্য এবং বাইরের তাপ আটকে রাখার জন্য ঘন বা মোটা পর্দা ব্যবহার করুন।
নিয়মিত সার্ভিসিং: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিয়মিত বিরতিতে এসির সার্ভিসিং করানো।
মনে রাখবেন, কেবল ঠান্ডা বাতাস পাওয়াই যথেষ্ট নয়, বুদ্ধিমত্তার সাথে এবং সঠিক নিয়ম মেনে এসি ব্যবহার করাই আসল নিরাপত্তা। এসি ব্যবহারে অসাবধানতা চরম পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।