বহু বছর ধরে চলা আইনি জট এবং পরিবহন সমস্যার শেষে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে অবশেষে পুরোনো বাসগুলির ‘স্বাস্থ্য’ যাচাই করে পারমিট দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য পরিবহণ দফতর। এই সিদ্ধান্তকে বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনগুলি ‘ঐতিহাসিক জয়’ হিসেবে দেখছেন।
আজ, বুধবার প্রথম এক বাসকে ছাড়পত্র দেওয়ার মধ্যে দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু হলো।
হাই কোর্টের মূল নির্দেশ: ‘বয়স নয়, স্বাস্থ্যই প্রধান’
হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল সুস্পষ্ট: গাড়ির বয়স নয়, বরং তার ফিটনেস, দূষণমাত্রা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি কোনো বাস বয়সের সীমা পেরিয়ে গেলেও রাস্তায় চলার উপযুক্ত প্রমাণিত হয়, তবে তাকে পারমিট দিতে হবে। বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন এবং কেএমডিএ (কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) এলাকায় ১৫ বছরের বেশি পুরোনো বাসের জন্য পারমিট দেওয়া শুরু করেছে পরিবহণ দফতর।
বাসমালিকদের দীর্ঘ লড়াইয়ের জয়
পশ্চিমবঙ্গ বাস মিনিবাস মালিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম ছাড়পত্র পাওয়া বাসের মালিক প্রদীপ নারায়ণ বসু এই সিদ্ধান্তকে ‘দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা বহু সঙ্গীকে হারিয়েছি। তাঁরা এই ঐতিহাসিক জয় দেখে যেতে পারলেন না। এরফলে শহরে এবার আরও বেশি বাস নামবে এবং যাত্রী পরিষেবা বাড়বে।”
বাসমালিকরা ১৩ মাস আগে আদালতে আবেদন করেছিলেন যে, লকডাউনের সময় প্রায় দুই বছর বাস না চললেও সেই সময়টুকু বাসের বয়স হিসেবে ধরা হয়েছে, যা ছিল অন্যায়। তাদের দাবি ছিল— অনেক পুরোনো বাসই এখনও রাস্তায় চলার উপযুক্ত।
যাত্রী স্বস্তি ও পরিবহণের ভবিষ্যৎ
২০০৯ সালে পরিবেশ আদালতের নির্দেশে কেএমডিএ এলাকায় ১৫ বছরের বেশি পুরোনো পেট্রল-ডিজেল চালিত বাস চলাচল নিষিদ্ধ হয়েছিল, যার ফলে বিপুল সংখ্যক বাস বাতিল হওয়ার মুখে পড়ে।
বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি করেন এবং পরিবহণ দফতরে পেশ করা খসড়া বিজ্ঞপ্তিটি দ্রুত সাধারণের জন্য প্রকাশের নির্দেশ দেন। বাসমালিক সংগঠনের নেতৃত্বদের অনুমান, এই রায়ের ফলে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ বাস আবারও কলকাতার রাস্তায় যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ পাবে। এর ফলে একদিকে যেমন বাসমালিকরা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচলেন, তেমনই নিত্যযাত্রীরাও শহরে আরও বেশি বাসের পরিষেবা পাবেন।