১৫ আগস্ট, ভারতীয় ক্যালেন্ডারে নিছকই একটি তারিখ নয়, এটি ভারতের দীর্ঘ এবং কঠিন স্বাধীনতা সংগ্রামের এক জীবন্ত স্মৃতি। যেদিন দেশ স্বাধীনতা উদযাপন করে, সেদিন আমরা আমাদের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ, ঐক্য এবং অদম্য চেতনার কথা স্মরণ করি। একই সাথে, ১৯৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের অসামান্য অগ্রগতির স্বীকৃতিও এই দিনটির মূল বার্তা।
কেন উদযাপন করি স্বাধীনতা দিবস?
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, দীর্ঘ ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছিল ভারত। এটি ছিল অত্যাচার ও পরাধীনতার এক অন্ধকার অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি এবং একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক দেশের জন্মলগ্নের সূচনা। আজও, এই দিনটি সারা ভারতে সগর্বে উদযাপিত হয় उन অসংখ্য বীর যোদ্ধাদের সাহস, দৃঢ় সংকল্প এবং আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, যাঁরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা
ভারতের স্বাধীনতা রাতারাতি অর্জিত হয়নি। এটি ছিল কয়েক দশক ধরে চলা নিরন্তর সংগ্রাম, আন্দোলন এবং বিপ্লবের ফল, যেখানে বহু বীরত্বপূর্ণ এবং মধ্যপন্থী ব্যক্তিত্বের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীনতা দিবসে আমরা বিশেষ ভাবে স্মরণ করি:
মহাত্মা গান্ধী: অহিংস প্রতিরোধের জনক হিসেবে পরিচিত তিনি লবণ সত্যাগ্রহ এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মতো ঐতিহাসিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সুভাষ চন্দ্র বসু: তাঁর নেতৃত্বে গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজ (INA) ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক সামরিক প্রতিরোধের সাহসী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল।
ভগৎ সিং, রাজগুরু এবং সুখদেব: এই তরুণ বিপ্লবীরা তাঁদের আত্মত্যাগ এবং বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেমের মশাল জ্বালিয়েছিলেন।
এছাড়াও রানী লক্ষ্মী বাই, সরোজিনী নাইডু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, জওহরলাল নেহেরু এবং অসংখ্য অন্যান্য ব্যক্তি, যাঁরা একটি স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন।
এই পুরুষ ও নারীরা এসেছিলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, ধর্ম এবং সামাজিক স্তর থেকে। তা সত্ত্বেও, তাঁরা সকলেই এক অভিন্ন স্বপ্ন পূরণের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছিলেন: একটি স্বাধীন ভারত।
কীভাবে ভারত স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে?
প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন শুরু হয় দিল্লির লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে, এরপর তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ নাগরিকরা অংশগ্রহণ করেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সারা ভারতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
শুধু দিল্লিতে নয়, সারা দেশেই এই দিনটি মহা সমারোহে উদযাপিত হয়। স্কুল, কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং স্থানীয় পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়:
পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান
দেশাত্মবোধক গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তৃতা ও নাটক
মিষ্টি বিতরণ এবং সামাজিক ভোজের আয়োজন
বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ত্রিরঙ্গা পতাকার রঙে সেজে ওঠে এবং মানুষজন গর্বের সাথে কেসর, সাদা ও সবুজ রঙের পোশাক পরিধান করে।
১৯৪৭ সাল থেকে ভারতের যাত্রা: অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে
১৯৪৭ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি জাতি থেকে, ভারত আজ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, মহাকাশ গবেষণায় অগ্রণী এবং প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল প্রতীক হিসেবে পরিচিত। সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, ভারত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা এবং ডিজিটাল ক্ষেত্রে নিরন্তর এগিয়ে চলেছে।
১৫ আগস্ট কেবল অতীতের স্মৃতিচারণের দিন নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার দিন। একটি শক্তিশালী, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ভারত গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা এই দিনটি উদযাপন করি।