নিউ গড়িয়া (কবি সুভাষ) স্টেশনের একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনার পর এবার কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ ব্লু লাইনের ভূগর্ভস্থ পরিকাঠামো নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। টালিগঞ্জ থেকে দমদম পর্যন্ত প্রায় ১৬.৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ভূগর্ভস্থ করিডোরের বয়স ৪০ বছর ছাড়িয়ে গেছে, যার কারণে টানেল, প্ল্যাটফর্ম ও পিলারের বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়, ফাটল এবং জল চুঁইয়ে পড়ার মতো সমস্যা প্রকট হয়েছে। এই অবস্থায়, মেট্রো রেল ৫০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় ধরে পুরো টানেলের ব্যাপক সংস্কারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার পি. উদয় কুমার রেড্ডি সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো নিউ গড়িয়া স্টেশনের আপ প্ল্যাটফর্মের পুনর্নির্মাণ। এটি শেষ হওয়ার পর টানেল সংস্কারের কাজ শুরু হবে। এই প্রকল্পের জন্য পরামর্শদাতা সংস্থা RITES-কে নিযুক্ত করা হয়েছে।
নিউ গড়িয়া স্টেশনের পরিস্থিতি
গত ২৮ জুলাই, নিউ গড়িয়া স্টেশনের আপ প্ল্যাটফর্মের কলামে ফাটল দেখা দেওয়ায় ওই স্টেশনের যাত্রী পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্গাপুজোর আগেই এই অংশের ভাঙার কাজ শুরু করার জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। জেনারেল ম্যানেজার রেড্ডির মতে, স্টেশনটি ভেঙে নতুন করে তৈরি করতে প্রায় নয় মাস সময় লাগবে।
টানেলের মূল সমস্যাগুলো:
- ট্র্যাকের ক্ষয়ক্ষতি: দীর্ঘ ৪০ বছরের ব্যবহারের কারণে টানেলের বিভিন্ন স্থানে ট্র্যাক দেবে গেছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ট্রেনের গতি ৮০ কিমি/ঘণ্টা থেকে নেমে গড়ে ৫৫ কিমি/ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তার জন্য কিছু নির্দিষ্ট অংশে গতি আরও কমানো হচ্ছে।
- জল জমার সমস্যা: টানেলের বহু অংশে ডায়াফ্রাম দেয়াল দিয়ে জল চুঁইয়ে পড়ছে। এর ফলে ভারী বর্ষায় সেন্ট্রাল-চাঁদনী চক অংশ এবং পার্ক স্ট্রিট স্টেশন প্লাবিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর সময়েও একই সমস্যা দেখা যায়, যার ফলে পরিষেবা দীর্ঘক্ষণ বন্ধ ছিল।
- পিলার ও প্ল্যাটফর্মের ক্ষয়: ভূগর্ভস্থ পিলারগুলির অনেকগুলো ক্ষয়ে গেছে। ওভারহেড তার থেকে প্রবাহিত বিদ্যুৎ পিলারের কাঠামোকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিচ্ছে। প্ল্যাটফর্মেও ভাঙচুর ও ক্ষতির চিহ্ন দেখা গেছে।
১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর এসপ্ল্যানেড থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত কলকাতার প্রথম মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে টালিগঞ্জ-দমদম করিডোর সম্পূর্ণরূপে চালু হয়। যদিও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, কিন্তু ৪০ বছরের পুরনো এই পরিকাঠামো এখন বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
সংস্কার ও উন্নয়নের পরিকল্পনা:
মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ শুধু টানেলের মেরামতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না, বরং তারা সিগন্যালিং সিস্টেমকেও আধুনিক করার পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো সম্ভব হবে এবং ভবিষ্যতে যাত্রীসেবা আরও দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন হবে।