ব্যবসায়িক শত্রুতা এবং টাকার লোভে নিজের শ্যালককে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগ উঠল জামাইবাবুর বিরুদ্ধে। বারুইপুরের বেগমপুর এলাকার বাসিন্দা, বছর পঁচিশের যুবক শান্ত মন্ডল হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। খুনের ঘটনার ঠিক ১০ দিনের মাথায় মূল অভিযুক্ত জামাইবাবু-সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করল বারুইপুর থানার পুলিশ।
ধৃত মূল অভিযুক্ত জামাইবাবুর নাম দেবব্রত পাত্র, বাড়ি বারুইপুর বেলেগাছি এলাকায়। বাকি ধৃতরা হলো— মিনাজুল পাইক, জসিমউদ্দিন লস্কর ও অটোচালক হাফিজুল মোল্লা।
গলার সোনার চেন ও টাকার লোভেই খুন!
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত শ্যালক শান্ত মন্ডল বেঙ্গালুরুতে মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করতেন এবং তাঁর ব্যবসা ভালো চলছিল। অন্যদিকে জামাইবাবু দেবব্রত পাত্র সেখানেই খাবার ডেলিভারি দেওয়ার কাজ করতেন। শ্যালকের গলায় মোটা সোনার চেন এবং হাতে প্রচুর টাকা দেখে অভিযুক্ত দেবব্রতর মনে ক্ষোভ ও রাগ জন্মায়। এর জেরেই শ্যালকের ব্যবসা হাতাতে এবং তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে দেবব্রত।
পুলিশ সূত্রে খবর, দশমীর দিন শ্যালককে ফোন করে ডেকে হাফিজুলের অটোতে তোলেন দেবব্রত। খুনের জন্য মিনাজুল ও জসিমউদ্দিনকে সঙ্গে নেয় সে।
মদের আসরেই ‘মৃত্যু পরোয়ানা’
প্রথমে অভিযুক্তরা শ্যালককে নিয়ে বাসন্তী যায়, কিন্তু সেখানে লোক থাকায় খুনের পরিকল্পনা বাতিল করে। এরপর রাতেই বেগমপুর ষাট কলোনিতে অটোতে বসেই বসে মদের আসর। মৃত শান্তর টাকায় নতুন করে মদ্যপানের ব্যবস্থা হয়। এই সময়েই চূড়ান্ত নৃশংসতার পরিকল্পনা হয়।
শান্ত যখন অনলাইনে টাকা পেমেন্ট করছিলেন, তখন অভিযুক্ত দেবব্রত অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর দেখে নেয়। জামাইবাবু আগে থেকেই একটি বড় ধারালো কাস্তে কিনে রেখেছিল শ্যালককে খুন করার উদ্দেশ্যে।
ধর থেকে আলাদা মাথা, গায়েব টাকা ও সোনা
রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ মদ্যপানের আসর শেষ হতেই, জামাইবাবু দেবব্রত পিছন থেকে শালা শান্ত মন্ডলের ঘাড়ে কোপ মারে। এক কোপেই প্রায় ধর থেকে মাথা আলাদা হয়ে যায়।
এরপর অভিযুক্তরা ঠান্ডা মাথায় মৃত যুবকের পকেটে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, গলার সোনার চেন এবং হাতের আংটি খুলে নেয়।
অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও ৮০ হাজার টাকা
খুনের পর অভিযুক্তরা যে যার বাড়িতে ফিরে গেলেও, পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য জামাইবাবু দেবব্রত পাত্রই প্রথম সারিতে ছিলেন। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের একজন মৃত শান্ত মন্ডলের মোবাইল থেকে সিম খুলে অন্য মোবাইলে তা ইন্সটল করে অনলাইনে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা তুলে নেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এখনও শান্তর অ্যাকাউন্টে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা রয়েছে। চারজন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করে পুলিশ ঘটনার পরবর্তী তদন্ত শুরু করেছে।