ঋণ পরিশোধের পরেও ৯ বছর ধরে ফ্ল্যাটের দলিল ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারি গৃহঋণ সংস্থা এলআইসি হাউজিং ফিনান্স লিমিটেড (এলআইসি-এইচএফএল)-কে মোটা অঙ্কের জরিমানা করল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ সংস্থার এই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আচরণের তীব্র সমালোচনা করে এই নির্দেশ দিয়েছে।
রাজারহাটের বাসিন্দা অলোক জেনা ২০০৯ সালে এলআইসি-এইচএফএল থেকে একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের মে মাসে তিনি সুদসহ সমস্ত ঋণ শোধ করে দেন। এরপর ফ্ল্যাটের মূল দলিল ফেরত পাওয়ার জন্য তিনি সংস্থার কাছে আবেদন করেন, কিন্তু বারবার আবেদন করেও কোনো ফল পাননি। উল্টো তাকে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
এই ঘটনায় অলোক জেনা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। তার আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল অভিযোগ করেন যে, তার মক্কেল ঋণ শোধ করে দেওয়ার পরেও সংস্থা তাকে হেনস্তা করছে। মামলার শুনানিতে এলআইসি-এইচএফএল কর্তৃপক্ষ কার্যত স্বীকার করে নেয় যে, ফ্ল্যাটের মূল দলিলটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
হাইকোর্ট এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছে। গত সপ্তাহে বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় তার পর্যবেক্ষণে বলেন, “একটি দায়িত্বশীল আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এলআইসি-এইচএফএল সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ঋণ শোধ হয়ে যাওয়ার পরেও ৯ বছর ধরে দলিল ফেরত না দেওয়া খুবই হতাশাজনক।”
আদালত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর একটি বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে এলআইসি-এইচএফএলকে নির্দেশ দিয়েছে যে, ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ বাবদ ফ্ল্যাটের মালিককে দিতে হবে। এই হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৬৮৮ দিনে মোট ৩৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হয়েছে অলোক জেনার।
এছাড়াও, আদালত আগামী ৮ সপ্তাহের মধ্যে সংস্থাকে নিজস্ব খরচে মূল দলিল অথবা তার ডুপ্লিকেট বা সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে ফ্ল্যাটের মালিককে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, এই নথিপত্র কার বা কাদের হেফাজতে ছিল, তা চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও সংস্থাটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।