লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা পদে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নেতৃত্বে বড় রদবদল

তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা নেতৃত্বে বড়সড় রদবদল করেছেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত সংসদে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। এর ফলে সংসদীয় কার্যক্রমে দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। এই পরিস্থিতিতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লোকসভায় তৃণমূলের নতুন দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দলের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে জানান যে, রাজ্যসভার সাংসদরা কার্যকর ভূমিকা পালন করলেও লোকসভায় সেই সক্রিয়তা চোখে পড়ছে না। এর জেরে কেন্দ্র এবং বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে বিরোধী দল হিসেবে তৃণমূল সঠিকভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে পারছে না।

এই পরিস্থিতিতে দলের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা করা হয়নি, তবে দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে দলনেত্রী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।

রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সিদ্ধান্তের একাধিক তাৎপর্য রয়েছে। একদিকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিজ্ঞ নেতার পরিবর্তে তুলনামূলক তরুণ অভিষেককে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা দলে প্রজন্মগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। অন্যদিকে, বিরোধী ‘INDIA’ জোট এবং বিজেপির ‘ভারত’ প্রচারের মাঝে সংসদে তৃণমূলের পক্ষে শক্তিশালী বার্তা রাখা অত্যন্ত জরুরি। অভিষেকের ধারালো বক্তৃতা এবং জাতীয় স্তরে তার সক্রিয় ভূমিকা এই কৌশলগত সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং যুব তৃণমূলের পর তিনি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এখন লোকসভায় সাংসদদের দিকনির্দেশ দেওয়ার দায়িত্বও তার কাঁধে আসায় অনেকেই এটিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিশ্বাস’ এবং ‘ভবিষ্যতের প্রস্তুতি’ হিসেবে দেখছেন।

এতদিন লোকসভার দলনেতা হিসেবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দলের পক্ষে লাভজনক ছিল। কিন্তু তার অসুস্থতার কারণে সংসদে দলের কার্যক্রম প্রভাবিত হচ্ছিল, যা নিয়ে দলের অন্দরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। এখন দেখার বিষয়, অভিষেকের নেতৃত্বে লোকসভায় তৃণমূল কতটা সক্রিয় হয় এবং দলের কণ্ঠস্বর কতটা জোরালো করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy