রুশ তেলের জন্য মার্কিন বাজারকে জলাঞ্জলি? সরকারকে ভাবতে বললেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ

রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল আমদানি নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নয়াদিল্লিকে সতর্ক করলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, মার্কিন বাজারকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাশিয়ান তেল কেনা কতটা যুক্তিযুক্ত। বর্তমানে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ, যা ব্রাজিল ছাড়া অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে নেই।

সোমবার হরিয়ানার গুরুগ্রামে বিএমএল মুঞ্জাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে তিনি বলেন, রাশিয়ার তেল আমদানি কতটা মূল্যবান, সে বিষয়ে ভারতের গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত। তিনি পরামর্শ দেন যে, এরপর নয়াদিল্লির উচিত আমেরিকাকে সরাসরি প্রশ্ন করা যে, যদি ভারত রুশ তেল আমদানি বন্ধ করে, তবে কি তারা এই অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করবে?

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, এই অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কের ফলে বেশ কিছু ভারতীয় পণ্য ইতিমধ্যে মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে আমেরিকান ক্রেতারা ভারতীয় পণ্য ছেড়ে অন্যান্য দেশ থেকে আসা সস্তা পণ্যের দিকে ঝুঁকবেন। তাই এই খাতগুলিতে শুল্ক ৫০ শতাংশে বাড়লেও বিশেষ কোনো ক্ষতি হবে না, কারণ বাজার ইতিমধ্যেই হাতছাড়া হয়েছে।

আমেরিকার সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হলে এই শুল্কের বোঝা অনেকটাই কমানো সম্ভব। তবে, ওয়াশিংটন ভারতীয় কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারে আরও বেশি প্রবেশাধিকার চায়, যা নয়াদিল্লি রাজি নয়। এই পরিস্থিতিতে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনার সঙ্গে চিনকে যুক্ত করে একটি বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, ভারত এবং চিনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনার জন্য এটি একটি ভালো সময়।

এছাড়াও, তিনি আসিয়ান বাণিজ্য ব্লকে ভারতের যোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন, তবে তাঁর মতে চিনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের অর্থনীতি নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ডেড ইকোনমি’ মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তার কারণে এ বছর ভারতীয় অর্থনীতির প্রত্যাশিত বৃদ্ধি নাও হতে পারে। তিনি টিসিএস-এর মতো বড় সংস্থার নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখা এবং আইটি কর্মীদের বেতন না বাড়ার মতো সমস্যাগুলির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “এই সব সমস্যাগুলির মোকাবিলা করিনি আমরা, বসে থেকেছি।” বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং মধ্যবিত্তের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy