রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ‘শাস্তি’ হিসেবে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। যদিও ভারত রাশিয়া ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে তেল আমদানি করে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন রুশ তেল কেনা বন্ধ করলে ভারতকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
আন্তর্জাতিক রিয়েল-টাইম ডেটা এবং অ্যানালিটিক্স সরবরাহকারী সংস্থা ‘কেপলার’-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলির জন্য রুশ তেল খুবই উপযোগী। এই তেল পরিশোধন করে পেট্রল, ডিজেল এবং বিমানের জ্বালানি অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। বর্তমানে ভারতের মোট তেল আমদানির প্রায় ৩৫.১ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে যা ছিল মাত্র ১.৭ শতাংশ।
কেন রুশ তেল ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
- উচ্চমানের পরিশোধন: রুশ ‘উরাল গ্রেড’ অশোধিত তেল থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি ডিজেল এবং জেট ফুয়েল পাওয়া যায়। ভারতের আধুনিক পরিশোধন পরিকাঠামো এই তেলের জন্য উপযুক্ত।
- কম খরচ: কেপলারের রিপোর্ট অনুযায়ী, অন্যান্য দেশ থেকে তেল আমদানি করলে প্রতি ব্যারেলে প্রায় ৫ ডলার বেশি খরচ হয়। রুশ তেল কেনা বন্ধ করে অন্য দেশ থেকে তেল কিনলে ভারতকে বছরে ৩-৫ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ করতে হবে, যা বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ৭-১১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
- সস্তা জ্বালানি: ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিমী দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ভারত সস্তায় রুশ তেল কেনা শুরু করে, যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মার্কিন শুল্কের প্রভাব
ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কের ফলে ভারতের ২৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি মার খাবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমানোর কথা ভাবছে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার কঠোর বার্তা দিয়েছে যে, জাতীয় শক্তি নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস করা হবে না।
কেপলারের রিপোর্ট বলছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করলে ভারতের পক্ষে বিকল্প হিসেবে গালফ, আটলান্টিক অববাহিকা, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে তেল আমদানি বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু এতে আমদানির খরচ বহুগুণ বেড়ে যাবে। ফলে সরকারকে তেলের খুচরা দামের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিতে হতে পারে, যা আর্থিক ভারসাম্য নষ্ট করবে।
সামগ্রিকভাবে, মার্কিন শুল্কের চাপ ভারত সরকারের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চাপ রয়েছে, তেমনই অন্যদিকে রয়েছে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার তাগিদ।