দুই দিনের সফরে ভারতে এসেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রোটোকল ভেঙে তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। কিন্তু এই সফরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি হলো দুই রাষ্ট্রপ্রধানের গাড়ি নির্বাচন। মোদীর আমন্ত্রণে নৈশভোজে যোগ দিতে দুই রাষ্ট্রপ্রধান সওয়ার হন সাদা রঙের টয়োটা ফরচুনারে (Toyota Fortuner), যা মুহূর্তেই কূটনৈতিক মহলে হইচই ফেলে দেয়।
কেন টয়োটা ফরচুনার?
প্রধানমন্ত্রী মোদীর অফিশিয়াল গাড়ির তালিকায় রেঞ্জ রোভার (ব্রিটিশ) ও মার্সিডিজ মে-ব্যাক এস-৬৫০ (জার্মান) থাকলেও, তিনি পুতিনকে সঙ্গে নিয়ে টয়োটা ফরচুনারে সওয়ার হন। এই ‘গাড়ি কূটনীতি’ নিয়ে কেন্দ্রের তরফে আনুষ্ঠানিক কোনো কারণ না জানানো হলেও, বিশ্লেষকরা এর পিছনে গভীর কূটনৈতিক বার্তা দেখছেন:
-
পশ্চিমি চাপকে উপেক্ষা: ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতকেও রুশ তেল কেনা বন্ধ করার জন্য বারবার চাপ দিয়েছে পশ্চিমি শক্তি, বিশেষত ইউরোপ। টয়োটা একটি জাপানি সংস্থা এবং ফরচুনার ভারতে উৎপাদিত হয়। বিশ্লেষকদের মতে, একটি অ-ইউরোপীয় সংস্থার গাড়িতে চেপে মোদী ও পুতিন সেই পশ্চিমি শক্তিকে পাল্টা স্পষ্ট বার্তা দিলেন—ভারত কারও চাপের কাছে মাথা নত করবে না।
-
ইউরোপীয় গাড়ির বর্জন: মোদীর রেঞ্জ রোভার টাটা গোষ্ঠীর হলেও গাড়িটি তৈরি হয় ব্রিটেনে। জার্মানিও ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং রাশিয়ার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পুতিন কোনো ইউরোপীয় সংস্থার গাড়িতে চাপলে ভুল বার্তা যেতে পারত। এই কূটনৈতিক সংবেদনশীলতা বজায় রাখতেই ইউরোপীয় গাড়ি এড়ানো হয়েছে।
-
প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদক্ষেপ: এই কূটনৈতিক চালের আরেকটি নজির দেখা যায় যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-ও রুশ ডিফেন্স মিনিস্টারকে নিয়ে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে যান ফরচুনারে চেপেই।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনাকে ‘ফরচুনার ডিপ্লোমেসি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, মোদীর মতো পাকা মাথার নেতা অকারণে কিছু করেন না। যখন মোদী-পুতিন টয়োটা ফরচুনারে চেপে লোকল্যাণ মার্গের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন পিছনে পিছনে যাচ্ছিল পুতিনের নিজস্ব ‘অরাস সেনাত’ এবং মোদীর রেঞ্জ রোভার—এই দৃশ্যটিই ভারতের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির প্রতীক।
বিজেপি মুখপাত্র শাহজাদ পুনাওয়ালাও ইঙ্গিতপূর্ণ এক্স পোস্টে লিখেছেন, “কেন দুজনে মিলে টয়োটাতে চাপলেন, বুদ্ধিমান মাত্রই বুঝবে।”