গত বছর মাল নদীতে হড়পা বানের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে মালবাজারের মানুষদের। সেই দুর্ঘটনায় নিজেদের বাড়ির দু’জনকে হারিয়ে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে মালবাজারের বর্ধিষ্ণু পাড়ায় কার্যত অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন মিতালি অধিকারী। তিনি জানান, নিজের ছোট সন্তানকে রক্ষা করতে পারলেও, বাড়ির অন্য এক ছেলেকে বাঁচাতে না পারার অপরাধবোধ তাঁকে আজও গ্রাস করে।
ভাসানের সেই দিন, যখন জল ছিল না
মিতালি অধিকারী সেদিনকার ঘটনার স্মৃতিচারণা করে বলেন, স্বামী, ভাসুর, জা, ভাসুরের ছেলে, নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁরা একসঙ্গে মাল নদীর ঘাটে ভাসান দেখতে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “আমরা বাড়ির সকলে একসাথেই ভাসান দেখতে যাই। স্থানীয়দের অনেকের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। সেবার যেহেতু ভাসানের জায়গা বদল করা হয়েছিল, তাই অনেকেই চেয়েছিলেন ভাসানের জল মাথায় ছুঁয়ে আসতে।”
সেদিন নদীর জল কম থাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। মিতালি দেবী উল্লেখ করেন, “গাড়ি নামার রাস্তা করা হয়েছিল। সে অর্থে জল ছিল না। কারণ একদিকে বোল্ডার ফেলে নদীর স্রোত অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে মানুষ সেই দিকেই যাচ্ছিল।”
মুহূর্তের মধ্যে হড়পা বান, হুড়োহুড়ি
সবকিছু স্বাভাবিক থাকার মধ্যেই নদীর জল হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। আর তখনই মাইকে ঘোষণা করা হয়, ‘সবাই নদী ছেড়ে উঠে চলে আসুন’। মিতালি বলেন, “আর তখনই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আমি আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে জলে পড়ে যাই।”
ভীষণ স্রোতে তাঁর ছেলে ভেসে যাচ্ছিল। তিনি কোনওমতে ছেলের হাত ধরে আটকানোর চেষ্টা করেন। তাঁর কথায়, “আমার নীচে ও পড়ে যায়। এরপর আমাদের ওপর দিয়ে লোক চলে যাচ্ছিল।” সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাঁদের অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
স্বামী ও পুলিশের তৎপরতায় রক্ষা
এই কঠিন সময়ে এক পুলিশ কর্মী প্রথমে তাঁদের টেনে তোলার চেষ্টা করলেও পারেননি। এর মধ্যেই মিতালির স্বামী ছুটে আসেন এবং তাঁদের টেনে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। মিতালি বলেন, “এর মধ্যে অপর এক পুলিশ আমাকে পাঁজাকোলা করে তোলে। আমার স্বামী আমার ছোট ছেলেকে তুলে আনে।”
পুলিশ ও স্বামীর তৎপরতায় সে যাত্রা মিতালি ও তাঁর সন্তান রক্ষা পেলেও, অধিকারী পরিবার হারিয়েছে দু’জনকে। সেই দুর্ঘটনার বীভৎসতা মনে করে আজও কান্নায় ভেঙে পড়েন মিতালি অধিকারী।
মালবাজারের এই ঘটনার পর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় প্রশাসন ও জনসাধারণের কী ধরনের সতর্কতা নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?