চলতি বছরের জুন মাসে শহর কাঁপানো কসবা ল কলেজের গণধর্ষণকাণ্ড ফের খবরের শিরোনামে। এবার অভিযোগ উঠল খোদ নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকি এবং চাপ দেওয়ার। ছাত্রীর বাবাকে প্রকাশ্যেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য সরাসরি হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বারুইপুর থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করার পর এই ঘটনায় নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
কী ঘটেছে?
নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, গত ১৯ নভেম্বর রাতে তিনি যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন দুইজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি মোটরবাইকে তাঁর পিছু নেয়। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দেননি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ওই দুই ব্যক্তি তাঁকে থামিয়ে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, যদি তিনি তাঁর মেয়ের দায়ের করা গণধর্ষণের মামলাটি প্রত্যাহার না করেন, তবে তাঁর ‘ভয়ঙ্কর পরিণতি’ হতে পারে। এই কথা শুনেই তিনি বুঝতে পারেন, এই হুমকি তাঁর কন্যার মামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
আতঙ্কিত অবস্থায় ছাত্রীর বাবা অবিলম্বে বারুইপুর থানায় গিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুলিশ কী বলছে?
নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। বারুইপুর থানা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা কে জানান, “আমরা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি এবং পুরো বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। কে বা কারা এই হুমকির নেপথ্যে রয়েছে, তা চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে।”
এক ঝলকে কসবা কাণ্ড:
-
ঘটনা: চলতি বছরের জুন মাসে কসবা ল কলেজের একটি কক্ষে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।
-
গ্রেফতার ও চার্জশিট: কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ঘটনার ৫৮ দিনের মধ্যেই প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র সহ মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করে এবং আগস্ট মাসেই চার্জশিট জমা দেয়।
-
অভিযুক্তরা: প্রধান অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্র (৩১) (কলেজের প্রাক্তন কন্ট্রাকচুয়াল স্টাফ ও তৃণমূল ছাত্রসংগঠনের প্রাক্তন নেতা) এবং শিক্ষার্থী জয়েব আহমেদ (১৯) ও প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০) বর্তমানে জেল হেফাজতে আছেন। একমাত্র কলেজের নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৫) ছাড়া বাকি সবাই কারাগারে।
-
পুনর্নির্মাণ: অভিযুক্তদের নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণও করেছিল পুলিশ।
একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসার পর এবার নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকির ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে— অভিযুক্তদের নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালী কোনো চক্র কি এখনও সক্রিয়? মামলার ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়, এখন সেটাই দেখার।