ভূতুড়ে ভোটার: নদিয়ার শান্তিপুরে ফর্ম এল ৭৫ বছরের বৃদ্ধের ‘তৃতীয় ছেলে’-র নামে! সম্পত্তি তিনভাগ হওয়ার আতঙ্কে রাতের ঘুম উধাও

নদিয়া জেলার শান্তিপুরে ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR) পর্বকে ঘিরে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ৭৫ বছর বয়সী সুভাষচন্দ্র রায় জানেন তাঁর দুই ছেলে—লক্ষ্মণ রায় এবং গোবিন্দ রায়। কিন্তু, বাড়িতে SIR-এর এন্যুমারেশন ফর্ম আসতেই মাথায় হাত বৃদ্ধের। দুই ছেলের নামে নয়, ফর্ম এসেছে তিন ছেলের নামে!

এই ‘ভূতুড়ে ছেলে’ বা তৃতীয় ছেলে শান্তনু রায় কোথা থেকে এলেন, সেই কথা চিন্তা করেই রাতের ঘুম উড়েছে সুভাষচন্দ্রের। তাঁর একটাই আতঙ্ক—এবার কি তাঁর সম্পত্তি তিন ভাগ করতে হবে!

বৃদ্ধের আসল চিন্তা:

শান্তিপুর ব্লকের রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম বিধানসভার নবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬০ নম্বর বুথের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সুভাষচন্দ্র রায়। তাঁর ছেলে গোবিন্দ আবার ওই বুথে বিজেপির বিএলএ-২।

বৃদ্ধ সুভাষচন্দ্র রায়ের বক্তব্য, “আমি জানি না এই শান্তনু রায় কে। আমার দুই ছেলে লক্ষ্মণ আর গোবিন্দ। বাড়িতে পাঁচজন ভোটার। যখন ওদের বিয়ে দিয়েছি, তখন শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানত আমার ২ ছেলে। এখন যদি এসব বৌমারাদের বাড়িতে শোনে, তাহলে ওদের ভুল ধারণা তৈরি হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার চিন্তা হচ্ছে অন্য জায়গায়। আমার অবর্তমানে যদি সে এসে সম্পত্তির দাবি করে, তাহলে আমার ছেলেদের কী হবে? আমি চাই এই শান্তনু রায়ের নাম বাদ দেওয়া হোক।”

রাজনৈতিক বিতর্ক ও বিজেপির অভিযোগ:

এই ঘটনায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার অভিযোগ তুলেছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। সুভাষচন্দ্রের ছেলে গোবিন্দ বিজেপি করেন এবং তিনি আবার বিজেপির বুথ এজেন্ট।

শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির সদস্য সাগরী দাস বলেন, “এই শান্তনু রায়ের নাম প্রথমবার শুনলাম। এই কারণেই আমরা এসআইআর-এর পক্ষে সওয়াল করেছি। এরকম আরও ‘ভূতুড়ে ভোটার’ বেরোবে।”

ছেলে গোবিন্দ রায়ও মনে করেন, তিনি বিজেপি করেন বলেই হয়তো কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করিয়েছেন। তিনি সঙ্গে-সঙ্গে বিএলও-কে জানালে তাঁকে বাবার সই করা অভিযোগপত্র বিডিও অফিসে জমা দিতে বলা হয়।

তৃণমূল ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:

পুরো ঘটনার দায় পরিবারের উপরেই চাপিয়েছেন নবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুদীপ প্রামাণিক (তৃণমূল)। তিনি বলেন, “ওরা এতদিন জানায়নি কেন? সব কিছু জেনে বসেছিল কেন? ভোটার লিস্টে একজন পরিবারের সদস্য সেজে বসে আছে। সেটা বিডিও অফিসে জানায়নি কেন? এটা ওদের ভুল।”

অন্যদিকে, শান্তিপুরের বিডিও সঞ্জিত মণ্ডল বলেন, “আমরা শুনেছি। হতে পারে বিএলও-র কাছে অন্য কোনো বুথের ফর্ম চলে গিয়েছে। তাই তিনি ওই বাড়িতে দিয়ে এসেছেন। ওই ব্যক্তি যেখানকার ভোটার, সেখানে নিশ্চয়ই নাম তুলে নেবেন। এটা এমনই বাতিল হয়ে যাবে।”

তবে প্রশ্ন হলো, এন্যুমারেশন ফর্মে ছবি-সহ যে শান্তনু রায়ের নাম লেখা রয়েছে, তিনি কে? তাঁর আসল পরিচয় কী? এ নিয়ে বিএলও বা প্রশাসন স্পষ্ট কোনো জবাব দিতে পারেনি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy