‘বেগমদের যুদ্ধ’ থেকে ভারত-বিদ্বেষী রাজনীতি, খালেদা জিয়ার প্রয়াণে ইতি এক বর্ণময় অধ্যায়ের

মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই শোকের ছায়া নেমে এল বাংলাদেশে। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি-র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি-র অফিশিয়াল পেজ এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ প্রথম নমাজের ঠিক পরেই চিরবিদায় নেন তিনি। এমন এক সময়ে তাঁর প্রয়াণ হল, যখন বাংলাদেশ এক চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সামনেই ১২ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন।

‘পুতুল’ থেকে রাজনীতির রাজপথ: ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া খালেদা খানমকে পরিবারের সকলে ভালোবেসে ‘পুতুল’ বলে ডাকতেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার পর তাঁর নাম হয় খালেদা জিয়া। স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। ১৯৮৪ সাল থেকে আমৃত্যু সামলেছেন বিএনপি-র চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব। ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস গড়েন। তাঁর আমলেই প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।

বেগমদের যুদ্ধ ও ভারতের সাথে সম্পর্ক: বাংলাদেশের রাজনীতি গত কয়েক দশকে এক ঐতিহাসিক দ্বৈরথের সাক্ষী থেকেছে, যা বিশ্বজুড়ে ‘বেগমদের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। একদিকে শেখ হাসিনা এবং অন্যদিকে খালেদা জিয়া—এই দুই নেত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নির্ধারণ করেছিল ঢাকার ভাগ্য। তবে খালেদার রাজনৈতিক আদর্শের মূলে ছিল তীব্র ভারত-বিরোধী জাতীয়তাবাদ। ১৯৭২ সালের ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তিকে ‘দাসত্ব চুক্তি’ বলে অভিহিত করা থেকে শুরু করে ২০১৩ সালে সফররত ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ এড়িয়ে যাওয়া—নয়াদিল্লির প্রতি তাঁর অনমনীয় অবস্থান বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। তিস্তার জলবণ্টন থেকে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, ভারতের চেয়ে চিন বা পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতেই বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি।

শেষের কয়েক বছর: ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ভাটার টান আসে। ২০২০ সালে মানবিক কারণে মুক্তি পেলেও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা তাঁর পিছু ছাড়েনি। গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর হাসিনা দেশ ছাড়লে নতুন সরকার তাঁকে সমস্ত মামলা থেকে মুক্তি দেয়। কিন্তু শরীরের সায় না মেলায় শেষমেশ হার মানলেন এই ‘আপসহীন নেত্রী’। তাঁর দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের (প্রয়াত) মধ্যে তারেক বর্তমানে দলের হাল ধরলেও, খালেদার মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হল।

Related Posts

© 2026 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy