বিহারে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হতেই নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছেন প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। প্রথমে তিনি নিজেই দাবি করেন যে খসড়া ভোটার তালিকায় তার নাম নেই, যার ফলে তিনি কীভাবে নির্বাচনে লড়বেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর কিছুক্ষণ পরই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই দাবির জবাব দেওয়া হয় এবং দেখিয়ে দেওয়া হয় যে ভোটার তালিকায় ৪১৬ নম্বরে তেজস্বীর নাম উজ্জ্বলভাবে বিদ্যমান। তবে এই সবকিছুর মাঝেই লালু-পুত্র আরও একটি নতুন বিতর্কে ফেঁসে গেছেন – প্রশ্ন উঠেছে, তেজস্বী যাদবের কাছে কি দুটি এপিক (EPIC) নম্বর রয়েছে? একজন ব্যক্তির কীভাবে দুটি এপিক নম্বর থাকতে পারে?
এপিক নম্বর হলো ইলেক্টোরাল ফটো আইডেন্টিটি কার্ডে (ভোটার আইডি কার্ড) থাকা অনন্য পরিচিতি নম্বর। তেজস্বী যাদব নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় যে এপিক নম্বর দিয়ে নিজের নাম খুঁজেছিলেন (RAB2916120), তাতে কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। অথচ, নির্বাচন কমিশন যখন তেজস্বীর নাম খুঁজে বের করে, তখন তারা ভিন্ন একটি এপিক নম্বর (RAB0456228) দেখায়।
যে দুটি এপিক নম্বর নিয়ে বর্তমানে এত চর্চা, তার মধ্যে প্রথমটি হল RAB0456228 এবং দ্বিতীয়টি হল RAB2916120। তেজস্বীর নাম না থাকার দাবির পরই পাটনার জেলাশাসক জানান, ২০২০ সালের নির্বাচনী মনোনয়নে তেজস্বী যে এপিক নম্বর উল্লেখ করেছিলেন, সেই নম্বরেই (RAB0456228) খসড়া ভোটার তালিকায় তার নাম রয়েছে। এমনকি, ২০১৫ সালের ভোটার তালিকাতেও তার এই একই এপিক নম্বর ছিল।
তাহলে প্রশ্ন উঠছে, তেজস্বী যাদবের কাছে দ্বিতীয় এপিক নম্বর RAB2916120 এল কোথা থেকে? নির্বাচন কমিশন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে যে, তেজস্বীর কাছে থাকা দ্বিতীয় এপিক নম্বরটি ভুয়ো। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির দুটি এপিক নম্বর থাকতে পারে না। ভোটার কার্ডে নাম বা ঠিকানা পরিবর্তন করা হলেও, এপিক নম্বর একই থাকে।
এই ঘটনা নিয়ে জেডিইউ (জনতা দল ইউনাইটেড) মুখপাত্র নীরজ কুমার বলেন, “তেজস্বী যাদবের দুটি নির্বাচনী পরিচয়পত্র রয়েছে। এটা নির্বাচন কমিশনের তদন্ত করা উচিত।”
কখন ভিন্ন এপিক নম্বর তৈরি হতে পারে?
সাধারণত, এপিক নম্বর তখনই পরিবর্তন করা যেতে পারে যখন সিস্টেমে কোনো ডুপ্লিকেট এপিক নম্বর জারি করা হয় অথবা যদি কোনো গুরুতর কেরানিমূলক (clerical) বা প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকে। এপিক নম্বর পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াটি নির্বাচনী নিবন্ধন অধিকর্তা (ERO) দ্বারা প্রশাসনিক ভিত্তিতে করা হয়, কোনো প্রার্থী বা নির্বাচনের নির্দেশে নয়। অর্থাৎ, যদি কোনো ভোটারের নম্বর পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে মনে করা হয়, তবে তার প্রক্রিয়াটি প্রশাসনিক সংশোধনের অধীনে করা হবে। এর জন্য একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যা কেবল স্থানীয় ERO-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়; নির্বাচন কমিশন সরাসরি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই প্রক্রিয়াটি করে না।
এই ঘটনা বিহারের রাজনীতিতে নতুন করে জলঘোলা করেছে এবং তেজস্বী যাদবের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই এখন সবার নজর।