‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ – এই প্রবাদটি সত্যি। দুপুরে ভাত খাওয়া বাঙালির সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু অনেকেরই দুপুরে ভাত খাওয়ার পর প্রচণ্ড ঘুম আসে এবং কাজে মন বসে না। কেন এমন হয়? এই বিষয়ে কলকাতা শহরের একাধিক বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ তাঁদের মতামত জানিয়েছেন।
পুষ্টিবিদদের মতামত: হরমোনের ভূমিকা
-
ইন্দ্রাণী ঘোষ (হেড ডায়েটিশিয়ান, মণিপাল হাসপাতাল, সল্টলেক): তিনি বলেন, “ভাত খেলে শরীরে কার্বোহাইড্রেট প্রবেশ করে। যার ফলে ঘুমে সহায়ক একাধিক হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। তার ফলেই ঘুম পায়।”
-
মীনাক্ষী মজুমদার (প্রধান পুষ্টিবিদ, ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, কলকাতা): তিনি একই মত পোষণ করে জানান, ভাত হল কার্বোহাইড্রেট এবং একসঙ্গে অনেকটা ভাত খাওয়ার কারণে শরীরে কিছু হরমোনের গতিবিধি বাড়ে, যার ফলস্বরূপ ঘুম আসে।
ঘুম আসার পেছনের বিজ্ঞান
দুপুরে ভাত খেয়ে ঘুম আসার পেছনের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ:
-
গ্লুকোজে রূপান্তর: ভাত খাওয়ার পর শরীর কার্বোহাইড্রেটকে দ্রুত গ্লুকোজ হিসাবে ভেঙে ফেলে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
-
ইনসুলিন ক্ষরণ: এই সুগার সামলাতে শরীর ইনসুলিন হরমোন নিঃসরণ করে।
-
ট্রিপটোফ্যান: ইনসুলিন হরমোন ট্রিপটোফ্যান নামক একটি অ্যামাইনো অ্যাসিডকে মস্তিষ্কে সহজে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
-
সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন: ট্রিপটোফ্যান মস্তিষ্কের ভেতরে সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে কাজ করে, যা রিল্যাক্সেশনে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটি মেলাটোনিন হরমোন তৈরি করে, যা মূলত ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে।
এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির কারণে দুপুরে ভাত খাওয়ার পর অনেকেরই ঘুম পায়।
সমস্যার সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যা সমাধানে দুটি সহজ উপায় বাতলে দিয়েছেন:
-
ভাত খাওয়া কমান: দুপুরে কম পরিমাণে ভাত খেলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম প্রবেশ করবে এবং ঘুম কম পাবে। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
-
খাওয়ার পর হাঁটুন: যদি ভাত খেয়েও ফেলেন, তাহলে খাওয়ার পর মিনিট দশেক হেঁটে নিন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতে রক্তে সুগার লেভেল কমে যাবে, যার ফলে ঘুম পাওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না।
পরামর্শ: যদি দিনের যেকোনো সময় অস্বাভাবিক ঘুম পায়, তবে সেটি সাধারণ বিষয় না-ও হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।